Pages

Thursday, January 30, 2014

দেখা-অদেখা বাংলাদেশ - বাংলাদেশের কিছু খন্ড-চিত্র বাই(By) প্যানোরমা ট্যুরিজম

লিচু ফল (Lichi Fruit) নিয়ে প্রতিবেদন:

আতিয়া মসজিদ (Atia Mosjid) নিয়ে প্রতিবেদন:

সাভারের সাপ (Snake) ধরা নিয়ে প্রতিবেদন:

Friday, January 24, 2014

বিশ্বের ২২ জন লিভিং ঈগলের একজন বাংলাদেশী: ঈসরাইলের সবচেয়ে বেশী সংখ্যক বিমান ধ্বংশকারী



প্যালেস্টাইনীদের সংগ্রাম নিয়ে পড়তে পড়তে হঠাৎ করেই একজন পরিচিত বাংলাদেশীর নাম পেলাম। ইসরাইলের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যুদ্ধ বিমানকে ভুপাতিত করার রেকর্ডটা ৪৮ বছর যাবৎ উনার দখলে! ভদ্রলোক চারটি পৃথক দেশের বিমান বাহিনীকে সার্ভিস দিয়েছেন, তিনটি ভিন্ন দেশের হয়ে যুদ্ধ করে শত্রুপক্ষের বিমান ধ্বংশ করেছেন এবং তিনটি দেশ থেকেবীরত্বসূচক খেতাব পেয়েছেন! এটাও একটা বিশ্ব রেকর্ড! যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উনাকে পৃথিবীর জীবিত ২২ জন 'লিভিং ঈগল' হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে!


তিনি এখনো জীবিত আছেন, বাংলাদেশেই আছেন। আমরা ক'জন তাঁকে চিনি? আমরা মুছা ইব্রাহিমের মিথ্যা এভারেস্ট জয়ের কাহিনী শিশুপাঠ্য করি, যাতে করে আগামী প্রজন্ম প্রতারক
হতে পারে। কিন্তু সাইফুল আজমদের উপেক্ষা করি, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ কখনো বীর হবার উৎসাহ না পায়।
Akm Wahiduzzaman পোস্টটির পড়ার পর বাকিটা কৌতূহল নিয়ে খুঁজে বের করলাম এই জীবন্ত কিংবদন্তীকে... এই জীবন্ত কিংবদন্তী হচ্ছেন 
"স্যার সাইফুল আজম"...

সাইফুল আজম ১৯৪১ সালে পাবনা জেলার খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পর ১৯৫৬ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান যান। ১৯৬০ সালে তিনি জিডি পাইলট ব্রাঞ্চের একজন পাইলট হন।

জুন ৬ , ১৯৬৭। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে। তৎকালীন পাকিস্তান এয়ারফোর্স থেকে ডেপুটেশনে আসা গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম পশ্চিম ইরাকের এক বিমান ঘাটিতে অবস্থান করছে। অনেকটা ভোজবাজির মতোই আকাশে চারটা ইজ্রায়েলি বিমানের ( যাদের কে এস্কোর্ট
করছিলো দুইটা ইস্রায়েলি মিরেজ ফাইটার ) উদয় হয়। আকস্মিক আক্রমণে ইরাকি এয়ারফোর্স
বিপর্জস্ত ।ইসারায়েলি ক্যাপ্টেন ড্রোর একের পর এক ইরাকি বিমানের ভবলীলা সাংগ করে চলেছে। তার সাথে সঙ্গী হিসাবে আছে আরেক ইজ্রায়েলি ক্যাপ্টেন গোলান। এই অবস্থায় আকাশে উড়াল দেয় সাইফুল আজম। উড়াল দেবার কিছুক্ষণের মাঝেই তার উইংম্যান কেও ফেলে দেয়
ইজ্রায়েলি ক্যাপ্টেন ড্রোর। কিন্তু সাইফুল আজম অন্য ধাতুতে গড়া। একে একে গোলান, ড্রোর সবার প্লেন ফেলে দেয় সে। মোটামুটি একা লড়াই করে ইজ্রায়েলি বিমান গুলোকে ইরাকের আকাশ ছাড়তে বাধ্য করে সে। ক্যাপ্টেন ড্রোর এবং গোলান কে পরে যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক
রাখা হয়।

এখন পর্যন্ত আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ সংখ্যক বিমান ঘায়েল করার রেকর্ড
ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের।

এছাড়া প্রথম বিশবযুদ্ধ থেকে শুরু করে এপর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক শত্রুপক্ষের বিমান ঘায়েল করার
রেকর্ড এর তালিকায় ও তিনি উপরের দিকে আছেন। আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ জর্দান-ইরাক-পাকিস্তান তাকে বীরত্ব সূচক পদকে ভূষিত করে। তিনটি দেশের সম্মান সূচক সামরিক পদক অর্জনের ঘটনা সামরিক ইতিহাসে বিরল। একই সাথে তিনটি দেশের হয়ে যুদ্ধ করা এবং একই ব্যাক্তির দ্বারা একের অধিক শ্ত্রু রাষ্ট্রের (ভারত
এবং ইসরায়েল) বিমান ভূপাতিত করার বিরল রেকর্ডের অধিকারীও এই একই ব্যাক্তি।

১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাকে সাময়িক ভাবে সারাগোধাতে অবস্থিত ১৭
স্কোয়াড্রন এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আযম এ সময় এফ-৮৬ স্যাবর
জেট বিমান এর পাইলট হিসেবে প্রধানত পদাতিক সহায়ক মিশন পরিচালনা করতেন। ১৯৬৫
সালের ১৯ এ সেপ্টেম্বর বিখ্যাত চাবিন্দা ট্যাংক যুদ্ধে অংশ নেন তিনি এবং বিমান থেকে রকেট ও গোলা বর্ষন করে একাধিক ভারতিয় ট্যাংককে ধ্বংস ও অকার্যকর করেন। এসময় চারটি ভারতিয় ”Gnat”জঙ্গি বিমান তাদের উপর আক্রমন করে। সাধারন ভাবে বিমান থেকে ভুমিতে যুদ্ধের উপযোগি অস্ত্র সজ্জিত থাকায় এসময় পাকিস্তানি বিমানগুলির পালিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ফ্লাইট লেফটেনান্ট সাইফুল আযম রুখে দাড়ান এবং বিমান যুদ্ধ
বা ডগ ফাইটে একটি ভারতিয় ”Gnat” জঙ্গি বিমান ভুপাতিত করেন।
এই কৃতিত্বের জন্য তাকে পাকিস্তানে ”সিতারা-ইজুরায়ত” (বাংলাদেশের বীরবিক্রম এর সমতুল্য, পাকিস্তানের তৃতীয় সামরিক বীরত্বের খেতাব) পদকে ভুষিত করা হয়। 

১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি চারটি F-86 Sabre এর ফরমেশনে অংশ নিয়ে ভারতের ভূমীতে আক্রমণের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করেন। হঠাৎ
দুইটি ভারতীয় Folland Gnat (Folland Gnat, F-86 এর চেয়ে Superior) তাদের পথ রোধ করে। ঘটনার জেরে সৃষ্ট ডগফাইটে সাইফুল আজম একটি Folland Gnat গোলাবর্ষণ
করে ভূপাতিত করেন (পাইলট,ফ্লাইং অফিসার ভি মায়াদেব নিরাপদে Ejectকরে বেরিয়ে আসলে তাকে যুদ্ধবন্দি করা হয়). অন্য Folland Gnat টি রনেভঙ্গ দিয়েছে বুঝতে পারার পর
সেটিকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়।

১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম এবং অপর আরেক জন পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর অফিসার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সারওয়ার সাদকে রাজকীয় জর্ডান বিমান বাহিনীতে প্রেষণে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তারা রাজকীয় জর্ডান বিমান
বাহিনীর Hawker Hunter অপারেট করতেন। তারা সেখানে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ৫জুন ১৯৬৭ সালে আল মাফরাক থেকে উড্ডয়নের পর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম একটি Mystere IV কে তার দ্বিতীয়শিকারে পরিণত করেন।
এই ঘটনার মাত্র দুই দিন পর, ৭ জুন ১৯৬৭ ইরাকী বিমান বাহিনীতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পশ্চিম ইরাকী এয়ার ফিল্ড H-3 এ তিনি অবস্থান করাকালে, ইসরাইলী জঙ্গি জেট এয়ার ফিল্ড H-3 আক্রমণ করে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম ইরাকী Hawker
Hunter বিমান নিয়ে উড্ডয়ন করে একটি Mirage III এবং একটি Vautour Bomber
ভূপাতিত করেন (Vautour Bomber টির ছোট্ট কিছু ভগ্নাবশেষ সাইফুল আজমের Hunter এ
গেঁথে থাকতে দেখা যায়, যা থেকে তার সহকর্মীরা বুঝতে পারেন তিনি বিমানটিকে আকাশেই
গুড়িয়ে দিয়েছেন)। উল্লেখ্য Mirage III সাইফুল আজমের Hawker Hunter এর তুলনায়
বহুগুণে Superior। এছাড়া Mystere IV ও এয়ার টু এয়ার কমব্যাটের ক্ষেত্রে Hawker Hunter এর চেয়ে Superior। Mirage III, Mystere IV সাইফুল আজমের Skill, Tactics ও সাহসের কাছে পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু সাইফুল আযম ও তার স্কোয়াড্রন সাফল্য লাভ করলেও অন্যান্য জর্দানি বিমানগুলি ব্যার্থ হয় এবং ইসরাইলি বোমা বর্ষনে বেশিরভাগ জর্দানি বিমান ভুমিতেই ধ্বংস হয়ে যায় ও রানওয়েগুলি ক্ষতি গ্রস্ত হয়। 
সাইফুল আযম তার সাফল্যের জন্য জর্দানিদের প্রসংশা ও শ্রদ্ধা পান। বাদশাহ হুসাইন তার
নিজের গাড়িতে করে সাইফুল আযমকে তার মেস এরৎ পেীছিয়ে দেন।
জর্দান থেকে আর উড্ড্য়ন সম্ভব না হওয়ায় জর্দানি বিমান বাহিনীর পাইলটরা প্রতিবেশি ইরাকি বিমান বাহিনীতে সহায়তার সিদ্ধান্ত নেয়।

সাইফুল আযম আবারওপাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে ইরাকি বিমান বাহিনীর হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এবারও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে ইরাকি বিমান বাহিনীর হকার হান্টার বিমান নিয়ে তিনি তৎকালিন সর্বাধুনিক ফ্রান্সের "মিরেজ-৩সি" বিমান
ভুপাতিত করেন। তিনি একটি ”ভেটর”বোমারু বিমানও ভুপাতিত করেন। তার অসাধারণ কৌশল ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে জর্দান সরকার ”ওয়াসমা ই ইস্তেকলাল” বা স্বাধিনতা পদক
এবং ইরাক কর্তক ”নওয়াত-ই সুজ্জাত” পদকে ভুষিত করে। জর্ডান ও ইরাক উভয় দেশই তাকে বীর পদক প্রদান করে।

১৯৭১ সালে বাঙ্গালী হওয়ায় তাকে পাকিস্তান বিমান বাহিনী Grounded করে। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশের জন্ম হলে তিনি নতুন গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর Director
of Flight Safety এবং পরবর্তীতে Director of Operation হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৭৭ সালে তিনি উইং কমান্ডার পদে পদোন্নতি পান এবং ঢাকা বিমান বাহিনী ঘাটির বেস কমান্ডার হন। ১৯৮০ সালে সাইফুল আজম বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন
পদে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করার পর তিনি দুই টার্মে বেসরকারি বিমান চলাচল
কর্তৃপক্ষের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি Film Development Corporation এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ছিলেন।

তিনি ১৯৯১-৯৬ সালে পাবনা-৩ আসন থেকে (চাটমোহর উপজেলা, ফরিদপুর
উপজেলা ও ভাঙ্গুরা উপজেলা) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (BNP) পক্ষে পঞ্চম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে নাতাশা ট্রেডিং এজেন্সি, লিঃ (এয়ার ক্রাফট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সিও পরিচালনা করেন। স্ত্রী নাতাশা, তিন সন্তানের জনক তিনি।

২০০১ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। তিনি বাইশ জন “Living Eagles”এর একজন।
রসিক হাকিম

Saturday, January 18, 2014

৫ বার স্থাপত্যশিল্পে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশী অবদানকারী ব্যক্তিত্ব এবং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আইনস্টাইন এফ. আর. খান


      ফজলুর রহমান খান বিশ্বখ্যাত একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার- স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আইনস্টাইন বলা হয় এই বাঙ্গালীকে।আকাশচুম্বী ভবনের মূলতন্ত্র টুবুলার ডিজাইনের ফাদারও বলা হয় তাকে। ১৯৬০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আকাশচুম্বী সুউচ্চ ভবনগুলো তার টিউব স্ট্রাকচারাল সিস্টেমকে অনুসরন করেই বানানো। ড. এফ আর খান computer-aided design (CAD)-এরও অগ্রপথিক(pioneer)

         ২০০৯ সাল। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করছেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। রাজনৈতিক বক্তব্যের পাশাপাশি নিজেদের কথা বলতে গিয়ে ওবামা বললেন, “আমরা শ্রদ্ধা জানাই এক বাঙালি প্রকৌশলীকে। তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আকাশচুম্বী ভবনটি তাঁরই নকশা করা।”

লশকর বাউজি :: বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী ড. এফ আর খান। পুরো নাম ফজলুর রহমান খান। বাংলাদেশের বিশ্ববিখ্যাত এই স্থপতি ও প্রকৌশলী ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যক্ষ খান বাহাদুর আবদুর রহমান। 
শিক্ষাজীবনের শুরুতে ১৯৪৪ সালে ফজলুর রহমান খান আরমানিটোলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতার শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, শিবপুর) ভর্তি হন। ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে পঞ্চাশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তিনি ঢাকায় ফিরে এলে তৎকালীন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাকি পরীক্ষা সমাপ্ত করেন। কলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার এবং আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উভয় পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তাকে বিশেষ বিবেচনায় ব্যাচেলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ মূল্যায়নে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। 
ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যাপকের পদে নিযুক্তি লাভ করেন ফজলুর রহমান খান। এর পর ১৯৫২ সালে তিনি যুগপৎ সরকারি বৃত্তি ও ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। সেখানে ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইন থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তত্ত্বীয় ও ফলিত মেকানিক্স-এ যুগ্ম এমএস করার পর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৫ সালে তিনি আমেরিকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ‘স্কিড মোর’-এর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে এ কোম্পানির শিকাগো অফিসের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। পাশাপাশি তিনি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি-এর স্থাপত্য বিভাগে অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হন। সেখানে পরে তিনি প্রফেসর এমিরিটাস হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন ড. এফ আর খান নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, লি হাই বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইস ফেডারেল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট থেকেও সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৫৬ সালে দেশে ফিরে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পূর্বপদে যোগদান করেন।
ষাটের দশকে ড. এফ আর খান একের পর এক বড় বড় সব ভবনের নকশা আঁকতে থাকেন। ১৯৬৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ কোম্পানি তাদের সব কর্মীদের জন্য (তখন এই কোম্পানির কর্মচারীর সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার) একটি মাত্র কার্যালয় বানানোর স্বপ্ন দেখেন। সিয়ার্স অ্যান্ড কোম্পানির সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেন আমাদের ড. এফ আর খান।
পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ ভবন (১১০ তলা, এক হাজার ৪৫৪ ফুট উঁচু) শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার ভবনের নকশা তৈরি করেন তিনি। ১০১ একর জমির ওপর তিন বছর এক মাস ১০ দিনে সেই ভবনটি সিয়ার্স টাওয়ার (১৬ জুন, ২০০৯ থেকে পরিবর্তিত নাম উইলিস টাওয়ার) দাঁড়িয়ে যায় সম্পূর্ণ মাথা উঁচু করে। মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এক বাঙালি ব্যক্তিত্বও। এই ভবনই ড. এফ আর খানকে এনে দেয় বিশ্বখ্যাতি। এফ আর খানের জীবদ্দশায় (১৯৭৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তার নকশাকরা সিয়ার্স টাওয়ারই ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন এবং এখনও আমেরিকার সর্বোচ্চ ভবন সেটিই।
তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে শিকাগোর জন হ্যানকক সেন্টার, সিয়ার্স টাওয়ার-এর নকশা প্রণয়ন, জন হ্যানকক সেন্টার এর নকশা (১০০ তলা), জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, হজ্জ টার্মিনালের ছাদ কাঠামো (৫০,০০০ বর্গফুট) ও মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য নকশা ইত্যাদি। 
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে যখন দেশ ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এ লিপ্ত, প্রবাসের বাঙালিদের নিয়ে তিনি একটা ফান্ড গঠন করেছিলেন। এফ আর খানই প্রথম বাঙালি, যিনি মার্কিন সিনেটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমনে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।
১৯৭২ সালে এফ আর খান ‘ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ড’-এ ম্যান অব দি ইয়ার বিবেচিত হন এবং পাঁচবার স্থাপত্য শিল্পে সবচেয়ে বেশি অবদানকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত হবার গৌরব লাভ করেন (৬৫, ৬৮, ৭০, ৭১, ৭৯ সালে)। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে আমেরিকার ‘নিউজউইক’ ম্যাগাজিন শিল্প ও স্থাপত্যের ওপর প্রচ্ছদকাহিনীতে তাকে মার্কিন স্থাপত্যের শীর্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে। স্থপতি ড. এফ আর খান আন্তর্জাতিক গগনচুম্বী ও নগরায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এফ আর খান মুসলিম স্থাপত্য বিষয়ের ওপর নানা ধরনের গবেষণা করেছেন। ড. খান Tube in Tube  নামে স্থাপত্যশিল্পের এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন, যার মাধ্যমে অতি উচ্চ (কমপক্ষে একশত তলা) ভবন স্বল্প খরচে নির্মাণ সম্ভব। গগনচুম্বী ভবনের ওপর সাত খন্ডে প্রকাশিত একটি পুস্তক তিনি সম্পাদনা করেন।
১৯৮২ সনের ২৬ মার্চ জেদ্দায় মৃত্যুবরণ করেন এফ আর খান। মৃত্যুর পর তার দেহ আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং শিকাগোতে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৯৯৮ সালে শিকাগো শহরের সিয়ার্স টাওয়ারের পাদদেশে অবস্থিত জ্যাকসন সড়কের পশ্চিম পার্শ্ব এবং ফ্রাঙ্কলিন সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বের সংযোগস্থলটিকে নামকরণ করা হয় ‘ফজলুর আর. খান ওয়ে’।
১৯৯৯ সালে ফজলুর রহমান খানের স্মরণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ৪ টাকা মূল্যমানের এই টিকিটটিতে রয়েছে ফজলুর রহমান খানের আবক্ষ চিত্র, আর পটভূমিতে রয়েছে সিয়ার্স টাওয়ারের ছবি।




Natural World - Land Of The Falling Lakes: Plitvice Lakes National Park, Croatia By BBC

Plitvice Lakes National Park is the oldest national park in Southeast Europe and the largest national park in Croatia

Thursday, January 16, 2014

ইউটিউবের (YouTube) সহ-প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জাওয়েদ করিম।

ইউটিউবের (YouTube) সহ-প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জাওয়েদ করিম


ইন্টারনেট জগতের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ভিডিও আদান-প্রদান করার ওয়েব সাইট ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা (Co-Founder of YouTube)  হলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জাওয়েদ করিম। ২০০৫ সালের ২৩শে এপ্রিল "Me at the zoo" নামের ভিডিওটি আপলোড করে করিম অফিসিয়ালি ইউটিউব আমাদের জন্য উন্মুক্ত করেন। এর বর্তমান কর্ণধার গুগল। ইউটিউব বর্তমান ইন্টারনেট জগতের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট যা এর সদস্যদের ভিডিও আপলোড, দর্শন আর আদান-প্রদানের সুবিধা দান করে আসছে। এই সাইটটিতে আরো আছে ভিডিও পর্যালোচনা, অভিমত প্রদানসহ নানা প্রয়োজনীয় সুবিধা।
১৯৭৯ সালে পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন জাওয়েদ করিম । জন্মের পরের বছরই ১৯৮০ সালে পশ্চিম জার্মানিতে চলে যায় তার পরিবার এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন তিনি। তার বাবা নাইমুল ইসলাম একজন বাংলাদেশী, বিশ্বখ্যাত 3M কোম্পানির গবেষক । মা ক্রিসটিন করিম একজন জার্মান বিজ্ঞানী, গবেষক এবং মিনিসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রির সহযোগী অধ্যাপক। এরপর ১৯৯২ সালে পরিবারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান জাওয়েদ। তিনি সেন্ট্রাল হাই স্কুল থেকে পাস করেন (সেইন্ট পল, মিনেসোটা), এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা শ্যাম্পেইনে ভর্তি হন। সেখান হতে তিনি ২০০৪ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। জাওয়েদ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন।
ওখানে পড়াশোনার সময়ই যোগ দেন অনলাইন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান পেপালে। সেখানে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী চাদ হার্লি এবং স্টিভ চেনের সঙ্গে আলোচনা করে ভিডিও শেয়ারিং সাইটের সম্ভাবনা যাচাই করে একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইটই বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে ইউটিউব ডটকম নামে ডোমেইন নিবন্ধন করে ফেললেন তারা । ডোমেইন নাম নিবন্ধনের পর তরুণ এ তিন প্রকৌশলী হাত লাগালেন সাইটটির ডিজাইনের কাজে। কয়েক মাসের চেষ্টায় দাড় করিয়ে ফেললেন একটা ডিজাইন। এরপর একই বছরের ২৩ এপ্রিলে ‘মি এট জু’ নামক প্রথম ভিডিও টি আপলোড করেন জাওয়েদ করিম নিজে। মে মাসে তারা সাইটটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ উন্মুক্ত করলেন। পরীক্ষামূলক সংস্করণে ব্যবহারকারিদের ব্যাপক সাড়া ফেললো ইউটিউব । দিন দিন বাড়তেই থাকলো ইউটিউবের ব্যবহারকারি সংখ্যা । ব্যবহারকারিদের জন্য সাইটটি অফিসিয়ালি উন্মুক্ত করা ২০০৫ সালের নভেম্বরে। ইউটিউব তরুণদের পরিকল্পনা, ধ্যান-ধারনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাদের ইউটিউবে বিনিয়োগে রাজি হলেন বিনিয়োগকারি প্রতিষ্ঠান স্কুইয়া ক্যাপিটাল। বর্তমানে আলেক্সা র‌্যাংকিং এ বিশ্বে গুগল ও ফেসবুকের পরের স্হানই ইউটিউবের।
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল ইনকর্পোরেশন ইউটিউব কিনে নিলেও প্রতিষ্ঠাতা তিনজন এখনো চাকরি করছেন চাদ হার্লি (সিইও), স্টিভ চেন (সিটিও) ও জাওয়েদ করিম (এ্যাডভাইজার) হিসেবে ।

ইউটিউব ছাড়াও আরো বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এ প্রকৌশলী।। তার প্রধান আবিষ্কার হলো পে-প্যালে এন্টি ফ্রড সিস্টেম যা পেপালকে আরো বেশি নিরাপদ করে অনলাইনে লেনদেনকে আরো সুদৃঢ় করেছে । জাওয়েদ পোর্টেবল ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স, সলভিং ড্যাড পাজল, থ্রিডি স্প্রিং সিমুলেশন, রোবোটিক ওয়েবক্যাম, রেডিওসিটি ইনজিন, বামপাম্পিং ডেমো, রে-ট্রেসার, লাইফ থ্রিডি, কোয়াক টু মডেল ভিউয়ার সহ বেশ কিছু প্রজেক্টের উদ্ভাবকও জাওয়েদ করিম।

Please see this video:

Wednesday, January 15, 2014

শ্রদ্ধাঞ্জলি – ছোট দেশের বড় বিজ্ঞানী :বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. জামাল নজরুল ইসলাম।“

 শ্রদ্ধাঞ্জলি – ছোট দেশের বড় বিজ্ঞানী :বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. জামাল নজরুল ইসলাম।


        প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম একজন অনন্য গণিতবিদ, শীর্ষস্থানীয় জ্যোতির্বিদ এবং বর্তমান বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর পদার্থ বিজ্ঞানী ছিলেন। মহা বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন ও প্রফেসর আবদুস্ সালামের গবেষণার সূত্র ধরে তিনি আরও সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টায় মৃত্যুর আগ পর্যমত্ম নিয়োজিত ছিলেন। মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি আমত্মর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। বেশ কিছু গাণিতিক সূত্র এবং জটিল গাণিতিক তত্ত্বের সহজ পন্থার উদ্ভাবক ড. জামাল নজরুল ইসলাম মহাকাশের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন। তাঁর লেখা বেশ কিছু বই অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য সূচিতে অমত্মর্ভুক্ত এবং পড়ানো হয়।

        ড. জামাল নজরুল ইসলামের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবী খ্যাত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আলোচনায় এসেছে। তার অসামান্য অবদানের জন্য চট্টগ্রাম আজ ইতিহাসের অংশ। তার প্রতিষ্ঠিত ‘রিচার্চ ফর ম্যাথমেটিকেল অ্যান্ড ফিজিকেল সায়েন্স’ নামে একটি গবেষণা সেন্টার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ জন ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
            ২০০১ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে একটি গুজব রটেছিল। বাংলাদেশেও এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় জামাল নজরুল ইসলাম গণিতের হিসাব কষে দেখান যে, সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, প্রাকৃতিক নিয়মে সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ এক সরলরেখা বরাবর চলে এলেও তার প্রভাবে পৃথিবীর কোন ক্ষতি হবে না।
           ড. জামাল নজরুল ইসলামেরগবেষণার উপর ভিত্তি করেই পদার্থবিজ্ঞানের নতুন অধ্যায়ের সুচনা হয়। তার অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ওয়েইনবারগ। তিনি বলেন, ‘‘we are particularly indebted to Jamal Islam, a physicist colleague now living in Bangladesh. For an early draft of his 1977 paper which started us thinking about the remote future”
                       নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম বলেছিলেন, এশিয়ার মধ্যে আমার পরে যদি দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পায়, তবে সে হবে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম’

                   ইসলামের প্রতি ছিল প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলামের পরম শ্রদ্ধা। বিশেষ করে সূফীবাদ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন সেমিনারে সারগর্ভ বক্তব্য উপস্থাপন করতেন।



বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম

- মুহাম্মদ এহছানুল হক মিলন
সভ্যতার পরিক্রমায় যুগে যুগে বহু প্রতিভাধর মানুষের আবির্ভাব হয়, যারা তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে অতি সাধারণ থেকে অসাধারণে পরিণত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আমত্মর্জাতিক খ্যাতিমান বিজ্ঞানী প্রফেসর ইমেরিটাস ড. জামাল নজরুল ইসলাম অন্যতম। বিজ্ঞান গবেষণায় তার সৃষ্টি সম্ভারগুলো আপন আলোয় আলোকিত।
ড. জামাল নজরুল ইসলাম একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন সহজ- সরল সাদা-সিধে, সদালাপি, বন্ধুবাৎসল, অত্যমত্ম বিনয়ী, জনহিতৈষী ও নির্ভেজাল দেশপ্রেমিক। অনুপম চরিত্রের অধিকারী এই গুণী মানুষটি শৈশব থেকে নিজেকে তৈরি করেছেন এক অনন্য সাধারণ মানুষ হিসেবে। বাংলাদেশে হাতে গণা কয়জন খ্যাতিমান বিজ্ঞানীর মধ্যে তিনি অগ্রণী। তিনি একাধারে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, খ্যাতিমান ভৌত বিজ্ঞানী, পদার্থ বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতি বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী ইত্যাদি। এক কথায় তিনি আপাদ মসত্মক স্কলার ছিলেন।
ছাত্র জীবনে তিনি যেমন মেধাবী ছাত্র ছিলেন, তেমনি শিক্ষকতা জীবনেও একজন আদর্শবান মহৎ শিক্ষক ছিলেন। খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ হিসেবে তার আকাশ ছোঁয়া ব্যক্তিত্ব ও পান্ডিত্য তাকে এনে দিয়েছিল আলাদা অবস্থান। পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে সেখানে লোভনীয় জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে দেশ ও জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। বিজ্ঞান চর্চাকে জনপ্রিয় ও গতিশীল করার লক্ষ্যে বেছে নিয়েছিলেন মহান শিক্ষকতা জীবন। কেবল গবেষণার ক্ষেত্রেও নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সকল ধারায় তার সমানে চলা। বৈভবের ভাবনা কোন দিন তাড়িত করেনি। জ্ঞান আহরণ এবং তা জানার জন্যে সবার কাছে তুলে ধরা তার মূল লক্ষ্য ছিল। সকল কাজে তিনি সর্বোচ্চ গভীরে প্রবেশ করে ভিন্ন মাত্রার নতুন কিছুর সন্ধান করেছেন। জানার এবং জানানোর প্রতিটি ধারা তিনি সমৃদ্ধভাবে তুলে ধরেছেন। নিজের আদর্শ, দর্শন, কাজের ধরণ ও চিমত্মা চেতনার বিষয় সবকিছুই তা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের গুণাবলি তাকে গড়ে তুলেছে স্বতন্ত্র ধারায়। তাই তিনি মানুষ হয়ে একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেশ বিদেশে বিবেচিত।
প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম কেবল গবেষণা কর্মে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। মানুষের সুখ-দুঃখ এবং সামাজিক সমস্যা ও অসংগতি দূর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল তাঁর। আঞ্চলিক ও জাতীয় যে কোন ধরণের সমস্যা সমাধানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। জ্ঞান বিজ্ঞানে তাঁর যেমন অবদান ছিল তেমনি তিনি সবসময় দেশের অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন। তিনি বৈষম্যহীন ও সমতা ভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। যেখানে সব মানুষের রুজি রোজগারের নিশ্চিয়তা থাকবে। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন অসহায় ও দরিদ্র মানুষের প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতা আছে। অনেক সময় দেখা যেত স্যার তাঁর বেতনের একটি অংশ সবার অগোচরে সমাজের অবহেলিত মানুষদের দিয়ে দিতেন।
এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার এক সম্ভ্রামত্ম মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলাম সাহেব মুন্সেফ হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে জুড়িসিয়াল সেক্রেটারী পদে উন্নীত হয়। ড. জামাল নজরুল ইসলাম জন্মের সময় তার বাবা যশোরের ঝিনাইদহে মুন্সেফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৩৯ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি যশোরের ঝিনাইদহ সদরে জন্ম গ্রহণ করেন। মা ছিলেন পাকিসত্মানের খ্যাতিমান উর্দু কবি। জন্মের এক বছর পর তার বাবা কলকাতায় বদলি হন। জামাল নজরুল প্রথমে ভর্তি হন কলকাতা মডেল স্কুলে। পরবর্তীতে তিনি ভর্তি হন শিশু বিদ্যাপিঠে চতুর্থ শ্রেণীতে। বাবার বদলির সুবাদে এরপর তিনি চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাকে ডবল প্রমোশন দিয়ে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ে তিনি নবম শ্রেণী পর্যমত্ম পড়ালেখা করেন। মূলত এখানে পড়ার সময়ই গণিতের প্রতি তার অন্যরকম ভালবাসা সৃষ্টি হয়। নবম শ্রেণীতে উঠার পর পূর্ব পাকিসত্মান ছেড়ে পশ্চিম পাকিসত্মানে চলে যান। সেখানে গিয়ে ভর্তি হন লরেন্স কলেজে। এ কলেজ থেকেই তিনি সিনিয়র ক্যামব্রিজ ও হায়ার সিনিয়র ক্যামব্রিজ পাশ করেন। লরেন্স কলেজ পাঠ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বি.এস.সি অনার্স করেন। এরপর ১৯৫৭ সালে ক্যামব্রিজে পড়তে যান। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান থেকে স্নাতক ডিগ্রি (১৯৫৯) অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (১৯৬০) মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৬৪ সালে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
ড. জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যমত্ম যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে ডক্টরাল-উত্তর ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ক্যামব্রিজের ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে (বর্তমান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি) কাজ করেন ১৯৭৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যমত্ম। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যমত্ম ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যমত্ম ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যৈষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যমত্ম তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যমত্ম ইউনিভার্সিটি কলেজ কার্ডিফের (বর্তমান কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়) সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলের ফেলো ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে রিডার পদে উন্নীত হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৮৪ সাল পর্যমত্ম কর্মরত ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজে ১৯৬৮) ১৯৭৩ ও ১৯৮৪ সালে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ সালে ড. জামাল নজরুল ইসলাম দেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যমত্ম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রফেসর ছিলেন।
তিনি ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং পরিবর্তীতে তিনি ২০০৬ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে প্রফেসর ইমেরিটাস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি আমত্মর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। বেশ কিছু গাণিতিক সূত্র এবং জটিল গাণিতিক তত্ত্বের সহজ পন্থার উদ্ভাবক ড. জামাল নজরুল ইসলাম মহাকাশের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন। তাঁর লেখা বেশ কিছু বই অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য সূচিতে অমত্মর্ভুক্ত এবং পড়ানো হয়।
প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম একজন অনন্য গণিতবিদ, শীর্ষস্থানীয় জ্যোতির্বিদ এবং বর্তমান বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর পদার্থ বিজ্ঞানী ছিলেন। মহা বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন ও প্রফেসর আবদুস্ সালামের গবেষণার সূত্র ধরে তিনি আরও সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টায় মৃত্যুর আগ পর্যমত্ম নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রফল ছঁধহঃঁস ভরবষফঃযবড়ৎু, এবহবৎধষ জবষধঃরারঃু, ঈড়ংসড়ষড়মু. তাঁর গবেষণায় মূখ্য ক্ষেত্র ছিল। ঈড়ংসড়ষড়মু অর্থাৎ বিশ্বতত্ত্ব, যা সূত্রগত পদার্থ বিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত এবং জ্যোতিবিদ্যার সমন্বয়ে আবর্তিত হয়। এর লক্ষ্য হল বিশ্বজগতের উৎপত্তি বিকাশ ও পরিণতি সম্পর্কে গবেষণা।
অধ্যাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নাগরিক আন্দোলনেও সক্রিয় থেকে সংগঠকদেরও প্রেরণা যোগাতেন তিনি। দেশে যে কোন কঠিন মুহূর্তে চট্টগ্রামের যে কোন সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অভিভাবকতুল্য এ মানুষটি সব সময় এগিয়ে এসেছেন সদা হাস্য মুখে। তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন বাঙালি জাতি অত্যমত্ম মেধাবী। বিদেশী প্রভুদেশগুলো নিজেদের প্রয়োজনে বারবার এ দেশকে ব্যবহার করতে চেয়েছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণার প্রতি তাঁর যে দরদ, ঠিক একই দরদ ছিল অসহায় মানুষের প্রতি। মাতৃভূমির প্রতিও অসীম ভালবাসা ছিল তাঁর। তাই তিনি উন্নত জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে ছুটে এসেছিলেন দেশে। মানুষের প্রতি ছিল তার আস্থা। তিনি সব সময় বলতেন, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। জাতি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলেই মানুষ। সকলকেই কাছে টেনে নেয়ার অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল ড. জামাল নক্ষুরুল ইসলামের। বাংলাদেশের বিজ্ঞান গবেষণায় ড. জামাল নজরুল ইসলামের অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি বলতেন, বিজ্ঞান চর্চার জন্য ভালো ইংরেজী জানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। মাতৃভাষায়ও ভাল বিজ্ঞান চর্চা ও উচ্চতর গবেষণা হতে পারে। তিনি তা জীবদ্দশায় প্রমাণও দিয়েছেন একাধিকবার। মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশ্বজোড়া তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। বিজ্ঞান গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য তাঁকে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়েছিল এবং তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অতি উচ্চমানের রিসার্চ সেন্টার বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম এদেশের একজন কিংবদমত্মী পন্ডিত বিজ্ঞানী। বিজ্ঞান বিষয়ে তার গবেষণা, প্রজ্ঞা এবং সর্বোপরি একাডেমিক অবদান ছাত্র সমাজকে আলোকিত করেছে। বিজ্ঞানের ব্যাপক চর্চা এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণাকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম একজন অভিভাবকের মত শ্রম ও নিষ্ঠার সাথে নিরলস কাজ করেছেন।
বিদেশে বিলাসী জীবনের হাতছানি পেছনে ফেলে নিভৃতচারী এই মানুষটি দেশেই থেকেছেন মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসায়। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করতে বাংলায় বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন তিনি। বিজ্ঞানে তাঁর অনুধ্যান হলেও শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতিতেও ছিল তাঁর প্রবল আগ্রহ ও পান্ডিত্য। তিনি নিজে পিয়ানো ও সেতার বাজাতে পারতেন, উচ্চাঙ্গ বা ধ্রুপদী সঙ্গীতের প্রতি ছিল তাঁর প্রগাঢ় আগ্রহ।
সাহিত্য ও বিজ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় অত্যমত্ম বিরল ঘটনা। অথচ কী অবলীলায় তিনি তা করতেন অহর্নিশ! ইসলামের প্রতি ছিল তার পরম শ্রদ্ধা। বিশেষ করে সূফীবাদ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন সেমিনারে সারগর্ভ বক্তব্য উপস্থাপন করতেন।
যাদের চিমত্মা চেতনা ও গবেষণায় বিজ্ঞানের অশেষ অগ্রগতি হয়েছেন প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম তাদের অন্যতম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও তার গবেষণার মূল্যায়ন করলেও প্রিয় মাতৃভূমি তাঁকে মূল্য দিতে পারেনি। আর সেই অভিমান নিয়েই তিনি চলে গেলেন গত ১৫ মার্চ ২০১৩ শুক্রবার দিবাগত রাতে না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই সুকন্যা, বহু শিষ্য ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম স্যারকে যতটুকু দেখেছি, পাঠ করেছি তাতে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে তিনি মানুষ হিসাবে যেমন অতুলনীয়, তেমনি গবেষক হিসেবেও অসাধারণ। এই অনন্য ব্যক্তিকে স্মরণে ও পাঠে জাতি সমৃদ্ধি লাভ করবে। তাঁর রচনা ও গবেষণা চর্চা করে আমরা উপকৃত হবো।
প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম আমাদের দেশের তথা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের গর্ব।
উল্লেখ্য ১৯৯৭ সালে বায়তুশ শরফ আন্জুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলামকে সংবর্ধনা প্রদান করে। একই বছর ড. কাজী দীন মুহাম্মদ ও মাওলানা মুবারক আহমদ ছাহেবকে সংবর্ধনা প্রদান করে। স্মরণ করে মরহুম বাদশাহ্ মিঞা চৌধুরীকে। সে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ সূফী হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল জববার (রাহ.)।
 লেখক : শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


বিশ্বনন্দিত গাণিতিক,পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলামের ৭৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা”

          বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. জামাল নজরুল ইসলাম। ড. ইসলাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল এন্ড ফিজিকাল সায়েন্সের এর গবেষক এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর একজন সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। ড. ইসলাম ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমেরিটাস। তা ছাড়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল এন্ড ফিজিকাল সায়েন্সেসেও তিনি আমৃত্যু গবেষণা করে গেছেন। মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত জামাল নজরুল ইসলাম। ২০০১ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে একটি গুজব রটেছিল। বাংলাদেশেও এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় জামাল নজরুল ইসলাম গণিতের হিসাব কষে দেখান যে, সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, প্রাকৃতিক নিয়মে সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ এক সরলরেখা বরাবর চলে এলেও তার প্রভাবে পৃথিবীর কোন ক্ষতি হবে না। জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের আজকের দিনে ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও খ্যাতিমান ভৌতবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলামকে শুভেচ্ছা।

                 জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তখন এই শহরের মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জজের সমতুল্য) ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১ বছর তখনই তার বাবা কলকাতায় বদলি হন। জামাল নজরুল প্রথমে ভর্তি হন কলকাতার মডেল স্কুলে। এই স্কুল থেকে পরবর্তীতে শিশু বিদ্যাপীঠে। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যাপীঠেই পড়েন। পরবর্তীতে আবার মডেল স্কুলে ফিরে যান। কলকাতায় মডেল স্কুলের পর চট্টগ্রামে চলে আসেন। এখানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। এই ভর্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তাকে “ডাবল প্রমোশন” দিয়ে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করে নেয়া হয়। নবম শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুলে পড়াশোনা করেন। এখানে পড়ার সময়ই গণিতের প্রতি তার অন্যরকম ভালবাসার সৃষ্টি হয়। অনেক অতিরিক্ত জ্যামিতি সমাধান করতে থাকেন। নবম শ্রেণীতে উঠার পর পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে গিয়ে ভর্তি হন লরেন্স কলেজে। এই কলেজ থেকেই তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ ও হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পাশ করেন। সে সময় সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের ও লেভেল এবং হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ বলতে বর্তমানের এ লেভেল বোঝাতো। এ সময় নিজে নিজে অনেক অংক কষতেন। বিভিন্ন বই থেকে সমস্যা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতেন যা পরবর্তীতে তার অনেক কাজে আসে। উল্লেখ্য, হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজে তিনি একাই কেবল গণিত পড়েছিলেন। এটা বেশ উচ্চ পর্যায়ের গণিত হওয়ায় সবাই নিতে চাইতো না। এ সময়ই গণিতের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। লরেন্স কলেজের পাঠ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে যান। এখান থেকে বিএসসি অনার্স করেন। বিএসসি শেষে ১৯৫৭ সালে ইসলাম কেমব্রিজে পড়তে যান। কেমব্রিজের প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে আবারও স্নাতক ডিগ্রি (১৯৫৯) অর্জন করেন। তারপর এখান থেকেই মাস্টার্স (১৯৬০) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসসিডি (ডক্টর অফ সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।

                  কর্মজীবনে জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডে ডক্টরাল-উত্তর ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি-তে (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি)কাজ করেন ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভিজিটিং সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ, কার্ডিফ (বর্তমানে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়) এর সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলে ফেলো ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে রিডার পদে উন্নেএত হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে ১৯৬৮, ১৯৭৩ ও ১৯৮৪ সালে ভিজিটিং সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ সালে ইসলাম বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন
                              ড.জামাল নজরুল ইসলাম মানুষ হিসাবে ছিলেন অবিশ্বাস্য রকমের সজ্জন ও উপকারী স্বভাবের তিনি পারতপক্ষে কোনো অনুরোধ, উপরোধ বা প্রস্তাবে “না” বলতেন না। আর এই ভালোমানুষির মাশুলও তাঁকে দিতে হয়েছে প্রবলভাবে। পঠন-পাঠন, লেখালেখি আর গবেষণার কাজ ফেলে প্রায়শই নিজের মহামূল্যবান সময়ের অপচয় করতে হয়েছে তাঁকে—ছড়া পাঠের আসরের প্রধান অতিথি হয়ে, কি পোশাক-প্রদর্শনীর ফিতে কেটে, কি সুফি সম্মেলনের উদ্বোধন করে, কিংবা একেবারেই অনুল্লেখ্য কোনো গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করে। ব্যাক্তিগত জীবনে জামাল নজরুল ইসলাম বই পড়তে ভালবাসেন। তবে তিনি শখ হিসেবে গান শোনা ও ছবি আঁকার কথা বলেছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত সবচেয়ে প্রিয়। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এর প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই। ছোটবেলা থেকেই ক্যালকুলেটর ব্যবহারে তার অনীহা ছিল। গাণিতিক হিসাব মাথা খাটিয়ে করতে পছন্দ করেন। তাই কম্পিউটারের ব্যবহারও তার কাছে ভাল লাগে না। এই অপছন্দের মূল কারণ অবশ্য অপ্রয়োজনীয়তা। তিনি বলেন, কম্পিউটার তার কাজে লাগে না। তার চিন্তার অনেকখানি জুড়ে থাকে দেশ ও সমাজের উন্নতি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ। নিজের আয় থেকে কিছু অর্থ জমিয়ে দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার এই পরোক্ষ অবদান ও পরবর্তীতে দেশে ফিরে আসা থেকে তার দেশপ্রেমের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া তিনি বিদেশে পড়াশোনা করছে এমন সব শিক্ষার্থীকেই পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসতে উৎসাহিত করেন। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহ দিতে বাংলা ভাষায় বেশ কয়েকটি বিজ্ঞানগ্রন্থও লিখেছিলেন জামাল নজরুল ইসলাম। তার উল্লেখ যোগ্য প্রকাশনাঃ

১। দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স (১৯৮৩) – কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় অনুদিত হয়।
২। ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪) – ডব্লিউ বি বনোর এর সাথে যৌথ সম্পাদনা।
৩। রোটেটিং ফিল্ড্‌স ইন জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৫) – কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত।
৪। অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি (১৯৯২)


৫। কৃষ্ণ বিবর – বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত।
৬। মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ – রাহাত-সিরাজ প্রকাশনা
৭। শিল্প সাহিত্য ও সমাজ – রাহাত-সিরাজ প্রকাশনা
৮। স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ – কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত
৯। দ্য ফার ফিউচার অফ দি ইউনিভার্স – এনডেভারে প্রকাশিত


অর্থনীতি ও বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তার প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারঃ
১। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী ১৯৮৫ সালে তাঁকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে।
২। ১৯৯৪ সালে তিনি ন্যাশনাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি মেডেল পান।
৩। ১৯৯৮ সালে ইতালির আবদুস সালাম সেন্টার ফর থিওরিটিকাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমী অফ সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাঁকে মেডাল লেকচার পদক দেয়া হয় ।
৪। তিনি ২০০০ সালে কাজী মাহবুবুল্লাহ এন্ড জেবুন্নেছা পদক পান।
৫। ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
৬। ২০১১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর রাজ্জাক-শামসুন আজীবন সম্মাননা পদক লাভ করেন


ড. জামাল নজরুল ইসলাম ফুসফুসের সংক্রমণ ও হূদরোগের কারণে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ ৭৪ বছর বয়সে চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। আজ অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলামের ৭৬তম জন্মদিন। প্রখ্যাত বাঙালি পদার্থবিদ ড. জামাল নজরুল ইসলামের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

Source: http://ghuriblog.com/


শ্রদ্ধাঞ্জলি – ছোট দেশের বড় বিজ্ঞানী : লাখ নয়, তিন হাজারেই চলবে!


“বাংলাদেশের একটি ছেলে বা একটি মেয়েকেও যদি আমি বিজ্ঞানের পথে নিয়ে আসতে পারি, যদি তার সামনে মহাবিশ্বের রহস্য অনুসন্ধানের একটি নতুন দরজা খুলে দিতে পারি, তাহলেই আমার দেশে ফেরা স্বার্থক হবে।” ৩০ বছরের বিলাতী জীবনের অভ্যস্থতা, কেমব্রিজে অগ্রসর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ, চমৎকার গবেষণার পরিবেশ, সর্বোপরি মাসশেষে বাংলাদশের টাকায় লক্ষ টাকার বেতন – এসব কিছু ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে আসা প্রসঙ্গে আমাদের বিজ্ঞানী, বিশিষ্ট তাত্বিক কসমোলজিস্ট প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম প্রায়শ ওপরের কথাগুলো বলতেন। কথাগুলো যে কেবল তার সহধর্মিনী বা পরিবারের বন্ধুদের বলতেন তা নয়, জানাতেন বিলাতে তার সতীর্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-কেও। কারণ হকিং চাইতেন জামাল নজরুল ইসলাম বিলাতেই থেকে যান। হকিং প্রায়শ বলতেন – তুমি এখানে থেকেই তো দেশের জন্য অনেক কাজ করতে পারো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গাণিতিক ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র। নিজের কাজ দিয়ে জানতেন, তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান আর কসমোলজির আঙ্গিনায় চড়ে বেড়ানোর মত শিক্ষার্থী এই দেশেই আছে। দরকার কেবল তাদের পথ দেখিয়ে দেওয়া এবং রসদ জোগান দেওয়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথেমেটিক্যাল ও ফিসিকাল সায়েন্সে তার অধীনে মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থী এম ফিল ডিগ্রী লাভ করেছেন। আর ৩৩ জন পেয়েছন পিএইচডি ডিগ্রী!!! তাদের প্রত্যেকের কাজই আন্তর্জাতিক মানের। মনে রাখতে হবে, যে সময়ে জামাল নজরুল ইসলাম তার এই সব শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় অনুপ্রাণিত করেছেন তখন এমনকী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই অর্থে ভাল মানের ইন্টারনেট সংযোগই ছিল না। (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ নাই!)বিলাতে থেকেও দেশের জন্য কাজ করা যায় জামাল নজরুল ইসলাম সেটি জানতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ব্রটিশ সরকার যেন বাংলাদেশের পক্ষে থাকে সেজন্য তিনি প্রায় সকল ব্রিটিশ এমপিদের কাছে চিঠি লিখেছন। এমনকী, ব্রিটিশ এমপি লর্ড বাটলারের মাধ্যমে গনচীনের সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী চু এন লাই-এর কাছে অনুরোধ করেন যেন চীন পাকিন্তানের পক্ষে না দাড়ায়। তবে, হকিং-এর কথা মত এরকম কিছু করাটা বাংলাদেশের মত নতুন একটি দেশের জন্য যথেষ্ট নয়। বিশ্বে মাথা তুলে দাড়াতে হলে বাংলাদেশের তরুনদেরও বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোতে অবাধ সন্তরণ শিখতে হবে। কেমব্রিজে নিজের গবেষণা করে বাংলাদেশের তরুন-তরূনীদের একটি নতুন, চ্যালেঞ্জিং জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে জামাল নজরুল ইসলাম দেশে ফেরেন। স্মর্তব্য যে, মধ্য আশির দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর মূল বেতন নির্ধারণ করা হয় মাত্র তিন হাজার টাকা!!! সেই সময় অনেকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন কিন্তু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি জানতেন তিনি ভুল করেননি।
Ultimate
ছাত্র-ছাত্রীদের অণুপ্রাণিত করা, তাদের অভিভাবক হওয়ার পরেও তিনি তার নিজের গবেষণা এবং কাজের সময়টুকু ঠিকই বের করে নিতেন। ১৯৯২ সালে তার অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথেমেটিক্যাল কসমোলজি বইটি প্রকাশিত হয়। এরও পরে লিখেছন ফার ফিউচার অব দ্যা ইউনিভার্স। তবে, জামাল স্যারের সবচেয়ে বিখ্যাত বইটি হল – দি আলটিমেট ফেট অব দ্যা ইউনিভার্স। ১৯৮৩ সালে কেমব্রিজ প্রেস থেকে প্রকাশের পর এটি ফরাসী, পর্তুগিজ, যুগষ্লাভ ও জাপানিভাষায় অনুদিত হয়েছে। বইটি তার নিজের গবেষণার সারাংশ। গবেষণার সন্দর্ভ হাতে পাওয়ার পর বিমিষ্ট পতার্থবিজ্ঞানী ফ্রিম্যান ডাইসন তাঁর মত দুনিয়ার শেষ পরিণতি সম্পর্কে আকৃষ্ট হোন। জামাল স্যারের মৃত্যুর পর তিনি স্মরণ করেছেন – জামাল ইসলামের কাজ আমাকে দুনিয়ার শেষ পরিণতি সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুত্তু করেছে। জামাল ইসলাম সেই কাজটাই করেছেন যা কিনা অনেকেই করতে চায় না কারণ কাজটা কঠিন।

দুনিয়ার শেষ পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেকগুলো ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া লাগে। প্রোটন কণার লয় থেকে দুনিয়ার তাপীয় মৃত্যু। এখনো বিজ্ঞানীরা মহাবিস্ফোরণ থেকে এই দুণিযার সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশবাস করলেও দুনিয়ার শেষ পরিণতি কী হবে সেটা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন নি। প্রসারণ দিয়ে যার শুরু সংকোচন দিয়ে তার শেষ কী না কে জানে? তবে, জামাল নজরুল ইসলাম দেখিয়েছেন শেসের দিকে এক মহাশূণ্যতা সৃষ্টি হতে পারে। যে গুটিকয়েক বিজ্ঞানী মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের বিপরীতে স্টেডি স্টেট তিউরি মেনে চলেন তাদের  অন্যতম জয়ন্ত নারলিকর কেমব্রিজে জামাল নজরুলের সহপাঠী। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের আঙিনায় তখন একঝাঁক তরুন-তরুণীর বিচরণ। যাদের অনেকেই পরে নোবল পুরস্কার পেয়েছে। বিকেল হলে জামাল-সুরাইয়া দপ্তি তাদের দুই কন্যা সাদাফ আর নার্গিসকে নিয়ে হাটতে চলে যান নদীর পাড়ে। কোন কোনদিন সঙ্গী হয় স্টিফেন আর জেন হকিং, সঙ্গে তাদের পুত্র রবার্ট আর কণ্যা লুসি। আলোচনাতে সৃষ্টিতত্ত্ব যেমন আসে তেমনি আসে প্রকৃতির কথাও। প্রকৃতির সত্য উদঘাটন করতে হলে প্রকৃতিকে নিজর মত করে জানা দরকার। এই বোধ থেকে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম তাঁর মেয়েদের প্রকৃতি পাঠে উৎসাহ দিতেন।
দেশে ফিরবেন এই পরিকল্পনা তাঁর শুরু থেকেই ছিল। তাই ঠিক সময়ে মেয়েদের বাংলা শেখানো শুরু করেন। সঙ্গে গান-বাজনা। আইনস্টাইনের জগতের এই মানুষটি পিয়ানো এবং সেতার বাজাতে পারতেন চমৎকার। চট্টগ্রামে তার সাব-যা-যার বাসায় নিয়মিত হতো গানের আসর। কখনো কখনো জামাল স্যার বসে পড়তেন হারমোনিয়াম নিয়ে। স্ত্রী সুরাইয়া ইসলামও গলা মেলাতেন তাঁর সঙ্গে।

বিজ্ঞানের গবেষণা ছাড়াও অর্থনীতি আর সমাজ সংস্কারের বিষয়টিকেও শেষ জীবনে প্রাধ্যাণ্য দিয়েছেন। বিশ্বাস করতেন পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশনে আমাদের মুক্তি নেই। উন্নত বিশ্বের প্রতি তাঁর একটাই অনুরোধ ছিল – “তোমরা শুধু আমাদের পথ থেকে সরে দাড়াও, আমাদের ভালমন্দ আমাদেরকে ভাবতেই দাও।”
আর বিশ্বাস করতেন নতুন প্রজন্ম ঠিকই পথ বের করে ফেলবে। সে কারণ নতুনদের প্রায় সবটাতেই তার সমর্থন থাকতো। আমরা যখন গণিত অলিম্পিয়াড শুরু করি, এমনকী যখন আমাদের কমিটিও হয়নি তখন থেকে তিনি আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। আমৃত্যু ছিলেন আমাদের গনিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য।
দেশের শিক্ষার্থীদের যদি বেশি বেশি করে আমরা গণিত আর বিজ্ঞানের শিক্ষায় অণুপ্রাণিত করতে পারি তাহলেই কেবল এই বড় মাপে বিশ্ববিজ্ঞানীর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্পন্ন হবে।




প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ অনুষ্ঠানে ভূমি প্রতিমন্ত্রী
ড. জামাল নজরুল ইসলাম বিজ্ঞান বিশ্বের বিস্ময়!

চট্টগ্রাম অফিস : ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বলেছেন, প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম আধুনিক বিজ্ঞান বিশ্বের বিস্ময়! আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ বিজ্ঞানী হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির একজন। তার দেশপ্রেম ও বিজ্ঞানচর্চা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাকে স্মরণ রাখতে পারলে বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষায় বিপ্লব সাধিত হবে। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় আমরা গুণীদের চেয়ে ধনীদের বন্ধনাই বেশি করে থাকি, তাই আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি বেশি। ড. জামাল নজরুল ইসলামের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবী খ্যাত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আলোচনায় এসেছে। তার অসামান্য অবদানের জন্য চট্টগ্রাম আজ ইতিহাসের অংশ। তার প্রতিষ্ঠিত ‘রিচার্চ ফর ম্যাথমেটিকেল অ্যান্ড ফিজিকেল সায়েন্স’ নামে একটি গবেষণা সেন্টার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ জন ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। বিদেশে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ বিফল হয়নি, তার দেশে আসার সিদ্ধান্ত সফল হয়েছে। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য তার অসামান্য দরদ জাতিকে যুগের পর যুগ প্রেরণা যোগাবে।
২২ মার্চ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে আলোকিত জাতি ও সুশীলসমাজ বাস্তবায়ন পর্ষদ (আজসুবাপ) এর উদ্যোগে ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। আজসুবাপের সমন্বয় সচিব কাজি গোলাপ রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আজসুবাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আবুল কাসেম। স্মরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, ড. জামাল নজরুল সুহৃদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আশরাফুল ইসলাম, চবি পালি বিভাগের প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু, উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ফরিদ, কলামিস্ট অধ্যক্ষ ফজলুল হক, বাংলাদেশ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক কলামিস্ট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী অ্যানেল, দৈনিক পূর্বকোণের সহকারী সম্পাদক আবসার মাহফুজ, অ্যাডভোকেট খালেদা লতিফ, ইঞ্জিনিয়ার. আমিন উল্লাহ, সঙ্গীতশিল্পী স্বর্ণময় চক্রবর্ত্তী, জাহেদুল আলম, মো. নুরুল আলম, প্রকৌশলী ইব্রাহিম এম এ মান্নান, মো. সাজ্জাদ গণি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আজসুবাপের প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব এস এম সিরাজুদ্দৌলা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠক গবেষক মুহাম্মদ মহসীন চৌধুরী।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল কাসেম বলেছেন, সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নেয়ার আত্মপ্রত্যয়ী ড. জামাল নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের গর্ব। এমন মহৎ বিজ্ঞানী পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম। আমরা যতো বেশি ড. জামাল নজরুল ইসলামকে স্মরণ করতে পারবো ততো বেশি লাভবান হব। ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী চলছে সংকটের ঘনঘটা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। একটার পর একটা সমস্যা আমাদের ওপর ঝাপটা মারছে। মনুষ্যত্বের সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। মানব সমাজের এ পরিণতি দেখে তিনি ব্যথিত, ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতেন। প্রফেসর আশরাফুল ইসলাম বলেন, জামাল স্যার বিশ্বের অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ। বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মাঝে আকর্ষণীয় ও মনভুলানো পুরুষ ছিলেন। জীবনটা ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণে। বিজ্ঞান ও দর্শনের উৎকর্ষ সাধনে সমাজ, দেশ, পৃথিবীব্যাপী মানবসাম্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি একজন দার্শনিক বিজ্ঞানীই কেবল ছিলেন না, ছিলেন যাবতীয় মানবীয় গুণাবলীতে পুষ্ট এক পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ।



Friday, January 10, 2014

নান্দনিক ভালোবাসার শহর: প্যারিস, ভেনিস, লিসবন ও লন্ডন

নান্দনিক ভালোবাসার শহর
- তানভীর আহমেদ

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোই প্রেমপিয়াসী মানুষ পছন্দ করে ডেকে থাকেন রোমান্টিক সিটি। ভালোবাসার শহরগুলোকে বিভিন্ন মাত্রার মাপকাঠি দিয়ে মাপা হয়ে থাকে। কোনো শহর প্রাকৃতিকভাবে মনোমুঙ্কর, কোনোটির সভ্যতা নান্দনিকতার ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ। কোনো শহরের কৃষ্টি-সভ্যতা রোমাঞ্চ জাগায়। সেই শহরগুলো নিয়েই:

প্যারিস (ফ্রান্স)
পৃথিবীর সবচেয়ে রোমান্টিক শহর কোনটি- এ প্রশ্নের জবাবে সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছে যে শহরটি তার নাম প্যারিস। ফ্রান্সের প্যারিস নগরীকে বলা হয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এক অনন্য মিশেল। এ নগরীকে দেখে প্রেমে পড়েননি এমন মানুষ নেই। যারা একবার ফ্রান্সে বেড়াতে গেছেন আর পা পড়েনি প্যারিসে তা যেন হওয়ার নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে রোমান্টিক শহরটির নাম তাই প্যারিস। প্যারিসের মতো গোছানো শহর খুব কমই রয়েছে। প্রতিবছর প্যারিস লাখো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। পর্যটকদের প্রিয় এই শহরটি নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল ও নবদম্পতিদের সময় কাটানোর জন্য বিখ্যাত। আইফেল টাওয়ার ছাড়াও এ শহরের সবচেয়ে মনোমুঙ্কর বিষয় হলো এখানকার মেঘলা আবহাওয়া। পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ বাতাসে ঘুরে ফেরা মানুষের মনে মুহূর্তেই আনন্দের জোয়ার ওঠে এ শহরে এসে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের নানান পদের খাবার, ফ্যাশনেবল সমাজ এবং নিরাপদে ঘুরে ফেরার জন্য এ শহরটি বিনাপ্রশ্নে ভালোবাসার শহর।


ভেনিস (ইতালি)
পৃথিবীর ভাসমান শহরের তালিকার শীর্ষে যে শহরের নাম উঠে আসে সেটি হলো ভেনিস। ইতালির এ শহরটির মতো নান্দনিক শহর পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পুরো শহরটির বুক চিরে বয়ে গেছে স্বচ্ছ জলের প্রবাহ। পরিষ্কার জলের এই লেকগুলো এতটাই স্বচ্ছ যে, গা ঘেঁষে মাথা উঁচু করে থাকা দালানগুলোর প্রতিবিম্ব আর আকাশে ছুটে চলা মেঘ যেন নেমে এসেছে পানিতে। এ শহরে ঘুরে ফেরার জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের নৌকা। এসব নৌকায় আপনি দালানের ভিড়ে চলতে পারবেন একস্থান থেকে অন্যস্থানে। এ শহরে নেই কোনো কোলাহল, নেই যান্ত্রিক ব্যস্ততা। শুধু প্রশান্তি যেন বিছিয়ে আছে পুরো শহরটিতে। পর্যটকদের দারুণ পছন্দের এ শহরটি পদচারণায় মুখর থাকে বছরের বেশির ভাগ সময়। ক্যানেলগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দালানগুলোর নান্দনিক কারুকার্য এ শহরকে করেছে আরও মনোমুঙ্কর। শহরটিকে নিয়ে বলা হয়, এ শহরের সৌন্দর্যের রহস্য ভেদ করতে বেড়িয়ে দেখতে হবে নিজেকেই! প্রেমময় এমন শহর যেন দ্বিতীয়টি আর নেই।

লিসবন (পর্তুগাল)

পর্তুগালের লিসবন শহর। পৃথিবীর রোমান্টিক শহরগুলোর প্রথম সারির একটি। লিসবন শহরকে বলা হয় শিল্পী আর লেখকদের তীর্থভূমি। এ শহরে জমায়েত হন পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখক ও অভিনয় শিল্পী। নান্দনিক এ শহরটির নাম তাই ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত এই শহর চোখ জুড়িয়ে দেয় পর্যটকদের। এ শহরের চারপাশ দেখলে অনেকেই ভাববেন এ যেন কোনো চিত্রশিল্পীর মনের মাধুরী মিশিয়ে অাঁকা কোনো নগরী। এত সুন্দর শহর পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পরিষ্কার বাতাস, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া আর নিরাপদ শহর এটি। এখানকার রাস্তাগুলোতে হেঁটে ফিরলে নজর কাড়তে রাস্তার দুধারে সীমান্ত বিস্তৃত প্রাকৃতিক রূপলাবণ্য। প্রাকৃতিক দৃশ্যের এমন লোভনীয় সম্ভার কোনো দেশেই নেই। এই শহরের লাবণ্য দেখে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অনেকেই বলে থাকেন লিসবন গুপ্তরহস্যের শহর। এ শহরের সৌন্দর্য দেখে শেষ করা যাবে না। প্রতিদিনই এ শহর যেন সেজে ওঠে অনন্য রূপে। পৃথিবীর রোমান্টিক শহর হিসেবে লিসবন অপরূপ। 

লন্ডন (ইংল্যান্ড)

ইংল্যান্ডের মুকুট বলা হয় লন্ডন শহরটিকে। এ শহরটিও বেশ গোছানো ও পরিকল্পনামাফিক গড়ে ওঠার কারণে শহরের পরিবেশ পৃথিবীর রোমান্টিক সিটি হিসেবে গণ্য করেছে। পৃথিবীর বসবাসযোগ্য, সুস্থ নগরী হিসেবে লন্ডনের তুলনা লন্ডনই হতে পারে। সুপ্রশস্ত রাস্তা, সুন্দর বসবাসের বাড়ি, আইনশৃঙ্খলার নির্ভরযোগ্য পরিবেশ সব মিলিয়ে লন্ডন হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মেট্রোপলিটন সিটি। নাগরিক কোলাহল থাকলেও এ শহর নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক মনে করেন প্রেমপিয়াসীরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এ শহরে এসে ভিড় করেন সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটানোর জন্য। সবুজে ঢাকা নগরী লন্ডনে রয়েছে আধুনিকতার সর্বোচ্চ ছোঁয়া। এখানকার নাইটক্লাবগুলো জমে ওঠে রাতের বেলা। রেস্টুরেন্টগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্ন সংস্কৃতির সুস্বাদু ও বিখ্যাত খাবার। রাতের বেলা ঘুমুনোর জন্য রয়েছে আরামদায়ক আবাসন। ভোর ভাঙলে পরিচ্ছন্ন আকাশ ও স্বচ্ছ আবহাওয়া মনপ্রাণকে সতেজ করে তুলবে। সব মিলিয়ে লন্ডন এ সময়ের অন্যতম ভালোবাসার শহর।