Pages

Thursday, July 10, 2014

দুইটি দেশের গান - এই ওলী আল্লাহর বাংলাদেশ শহীদ গাজীর বাংলাদেশ এবং আল্লাহ তোমার দরবারে জানাই হাজার শুকরিয়া...


এই ওলী আল্লাহর বাংলাদেশ শহীদ গাজীর বাংলাদেশ.....:

আল্লাহ তোমার দরবারে জানাই হাজার শুকরিয়া...:

Friday, July 4, 2014

Forest of Bangladesh - Bangla Video Documentary By Prokriti O Jibon


Forests of Bangladesh:



Lawachara National Park:



Swamp Forest:

Ecosystem of Deciduous Forest:

Forest Resources of Bangladesh:

Evergreen Forest of Bangladesh:

Plants of Evergreen Forests:


Ecosystem of Sundarbans:

Natural Resources of Sundarbans:

Monoculture Forest:

Forest Diversity of Bangladesh:

Tuesday, July 1, 2014

দেশাত্ববোধক নজরুল সঙ্গীত - একটি গানের তিনটি ভিডিও, দেখুন প্লীজ।

দেশাত্ববোধক নজরুল সঙ্গীত - একটি গানের তিনটি ভিডিও, দেখুন প্লীজ।


এ কি অপরুপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি।।
রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল
আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।
ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল ল'য়ে অশনি।।

কেতকি-কদম-যূথিকা কুসুমে বর্ষায় গাঁথ মালিকা
পথে অবিরল ছিটাইয়া জল খেল চঞ্চলা বালিকা।
তড়াগে পুকুরে থই থই করে শ্যামল শোভার নবনী।।
শাপলা শালুক সাজাইয়া সাজি শরতে শিশির নাহিয়া,
শিউলি-ছোপানো শাড়ি পরে ফের আগামনী-গীত গাহিয়া।
অঘ্রাণে মা গো আমন ধানের সুঘ্রাণে ভরে অবনী।।

শীতের শূণ্য মাঠে তুমি ফের উদাসী বাউল সাথে মা,
ভাটিয়ালী গাও মাঝিদের সাথে গো, কীর্তন শোনো রাতে মা।
ফাল্গুনে রাঙ্গা ফুলের আবীরে রাঙ্গাও নিখিল ধরণী।। 

[জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত]


Kaptai National Park and Lake - Bangla Video Documentary By Prokriti O Jibon


Cox's Bazar (কক্সবাজার): Most important tourist spot of Bangladesh By Desher Pothe


Beautiful Chittagong - By Towrist Guide: Desher Pothe


Haor, Baor and Beels (হাওর, বাঁওড় ও বিল) - Bangla Video Documentary By Prokriti O Jibon


Haor, Baor and Beels:

Haor Ecosystem 01:

Haor Ecosystem 02:

Plants of Haor:

Birds of Haor:

 Biodiversity of Baikka Beel:

Hatirjheel, Dhaka - Some documentary about this beautiful place, Please see it.

Official Documentary of Hatirjheel Project on the eve of Inauguration:

Hatirjheel at night by ATN News:

Tuesday, June 10, 2014

Wildlife of Bangladesh - Bangla Video Documentary By Prokriti O Jibon


Wild Elephant:


Chunati Wildlife Sanctuary: 


Endangered Wildlife and Environment:

Endangered Wildlife and Environment-Last Part:

World Wildlife Day 2014:

Wildlife Sanctuary:


Wildlife Superstitions:

Wildlife Trade:

Wild Flowers and Wild Fruits:

Wild Ducks:


Tuesday, June 3, 2014

Halda River - An exclusive TV program of Hanif Sanket at Ittadi ইত্যাদি about this.



Please browse this website: http://www.haldariver.org


একটি গান:  হালদা নদী হালদা নদী, মাছের খনি হালদা নদী, এই নদী প্রকৃতির লীলাময়ী দান.. .. .. 

Thursday, May 15, 2014

Sunday, May 11, 2014

আট স্তরের ঝরনা দেখতে দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড় বাড়ছে: অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম মিরসরাই খৈয়াছরা ঝরনা

আট স্তরের ঝরনা দেখতে দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড় বাড়ছে:

অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম মিরসরাই খৈয়াছরা ঝরনা



চট্টগ্রাম অফিস : প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান করছে। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়, যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে খৈয়াছরা ঝরনায়। গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকা বাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে শরীরটা একটু হলেও ভিজিয়ে নেয়া যায় নিঃসন্দেহে।
মিরসরাইয়ের এই খৈয়াছরায় আট স্তরের ঝরনা দেখতে দেশি বিদেশি পর্যটকের ভিড় পড়েছে। দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক ঝরনাটি দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছে হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক। খৈয়াছরা এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছরা ঝরনা। শুধু যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত আর অবকাঠামো উন্নয়ন করলে সরকার এ পর্যটন স্পট থেকে রাজস্ব আয় করতে পারবে।উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান। এরমধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। বাঁশের সাঁকো, ক্ষেতের আইল, আঁকাবাকা পাহাড়ী পথ, ছরা, অন্তত ৪টি পাহাড় পেরিয়ে যখন ঝরনার স্বচ্ছ জলে  গা ভিজাবে পর্যটক তখন মনে হবে পথের এই দুরত্ব খুব সামান্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্যাপক প্রচারের ফলে প্রতিদিন ভিড় করছেন পর্যটকরা। ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকরা সবুজে সমারোহ পাহাড় আর ঝরনা দেখতে যেখানে প্রকৃতির অপরুপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে। পাহাড়ের সবুজ রং আর ঝরনার স্বচ্ছ জল মিশে মিশে একাকার হয়েছে মিরসরাইয়ের প্রাকৃতিক জলপ্রপাত খৈয়াছরা ঝরনায়। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ। যারা একবার খৈয়াছরা ঝরনা দেখেছেন তাদের মনে একটিই প্রশ্ন উঁকি দেয় বার বার ‘দেশে এমন সৌন্দর্যের ঝরনা দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা’। এমনই এক নান্দনিক ঝরনা পর্যটকদের আকর্ষন করছে যা খৈয়াছরা ঝরনা নামেই পরিচিত।

Please See this video:

খৈয়াছরা এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছরা ঝরনা।খৈয়াছরা এলাকার বাসিন্দা ডা. আলমগীর বলেন, ভুঁইয়ার টিলায় প্রায় ৫০ বছর ধরে প্রবাহিত হচ্ছে ঝরনাটি। পাহাড়ি ঝোঁপের কারণে মানুষ তখন খুব একটা ওই জায়গায় যেতনা। গত ৪-৫ বছর থেকে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক মাস ধরে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যেন পর্যটকের ঢল নেমেছে ঝরনা দেখার জন্য। পর্যটকদের অনেকেই এসেছেন ফেসবুকে ঝরনার ছবি দেখে। কুমিল্লার মাতলুব আহমেদ, বগুড়ার আহমেদ জাকি জিমি, ঢাকার শাহীদ সরকার, যশোরের আবদুল্লাহ গাজী, একেএম রনি ফেসবুকে খৈয়াছরা ঝর্নার ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তাই সবাই মিলে এসছেন এখানে। আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দেশের বিখ্যাত অনেক প্রাকৃতিক ঝরনা আমি দেখেছি। খৈয়াছরা ঝরনার যে সৌন্দর্য তা দেশে দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা আমার জানা নেই।আব্দুল্লাহ গাজী বলেন, আঁকা বাকা পাহাড়ি পথ, সোনালী ধান ক্ষেত, দুপাশের সবুজ রং আর রিমঝিম ঝরনার কলকল শব্দে প্রান জুড়িয়ে যায় সবার। এ যেন প্রকৃতির অবিশ্বাস্য এক রুপের খেলা। যা না দেখে বিশ্বাস করা যায়না। ঝরনার শেষ ধাপ পর্যন্ত ঘুরে আসা পর্যটক জাবেদ কাইসার বলেন, অনেক প্রশস্ত জায়গা জুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে শেষ ধাপে। তিনি বলেন, ঝরনার শেষ ধাপ পর্যন্ত যারা আসবেন তারা বাংলাদেশের সেরা কোন প্রাকৃতিক ঝরনা উপভোগ করবেন নিঃসন্দেহে।চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক দম্পতি আওলাদ হোসেন এবং নাসরিন সুলতানা বলেন, অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে ঝর্নায় আসতে। পাহাড় আর ঝর্নার সৌন্দর্য্যে তারাও খুব মুগ্ধ। তবে রাস্তার অসুবিধার কারনে ঝর্নায় আসা কষ্টসাধ্য বলে মন্তব্য করেন এই পর্যটক দম্পতি।খৈয়াছরা ঝর্নাকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে স্কুল পড়–য়া কিছু শিক্ষার্থী এবং এলাকার বেকার যুবকরা গাইড় হিসেবে কাজ করছেন। পর্যটকদের ঝর্নায় নিয়ে যাওয়া আসায় সহায়তা করছেন তারা। এজন্য পর্যটক ভেদে প্রতিবার ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তাদের। স্থানীয় খৈয়াছরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেনীর শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় প্রায় ২০ জন ছেলে গাইড় হিসেবে কাজ করছে। এদের ১০ জন স্কুল শিক্ষার্থী। প্রতি শুক্রবার পর্যটকের ভীড় বেশি থাকে। তাই তারা গাইড় হিসেবে কাজ করে। দিনে দুই বার পর্যটকদের নিয়ে গেলে তাদের আয় হয় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।
স্কুল শিক্ষার্থী তারেক, সোহেল, হাসান জানান, দেশের পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশীরা ঝর্না দেখতে আসছেন। দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান তারা।বন বিভাগের বারৈয়াঢালা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা অরুন বরণ চৌধুরী বলেন, ২০১০ সালে সরকার বারৈয়াঢালা ব্লক থেকে কুন্ডেরহাট (বড়তাকিয়া) ব্লকের ২৯৩৩.৬১ হেক্টর পাহাড়কে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। খৈয়াছরা ঝর্না জাতীয় উদ্যানের আওতাভুক্ত একটি দর্শনীয় স্থান। জাতীয় উদ্যানকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় করে তুলতে কাজ করছে বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান সহ ব্যবস্থাপনা কমিটি। ইতিমধ্যে খৈয়াছরা ঝর্নাকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় করে তুলতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম সরওয়ার উদ্দিন বলেন, খৈয়াছরা ঝর্নাকে ঘিরে রাস্তা, রেস্টুরেন্ট, কটেজ ইত্যাদি নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে এখান থেকে প্রচুর রাজস্ব আয় সম্ভব হবে।মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, খৈয়াছরা ঝর্ণার কথা শুনেছে। তবে আমি এখনো যায়নি। আগামী সমন্বয় সভার মিটিংয়ে আলোচনার মাধ্যমে খৈয়াছরা ঝর্নায় পর্যটকদের অবাধ যাতায়াতের ব্যবস্থাগ্রহনে কিছু পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Source: www.dailysangram.com and others

Friday, May 9, 2014

চট্টগ্রাম জেলার পর্যটন অঞ্চল/দর্শনীয় স্থান সমূহ

চট্টগ্রাম জেলার পর্যটন অঞ্চল/দর্শনীয় স্থান সমূহ :

প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত চট্রগ্রাম জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান। এসব স্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু বর্ণনা উপস্থাপন করা হল-

চট্টগ্রাম গেলে যা যা দেখে আসতে পারেন

সীতাকুণ্ড : চট্টগ্রামের মূল শহরে প্রবেশের আগেই সীতাকুণ্ড। বাসে বসেই দেখা যায় সুন্দর কিছু পাহাড়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ জায়গাটির গুরুত্ব অনেক। রামায়ণে বর্ণিত কাহিনীর অন্যতম পটভূমি সীতাকুণ্ড। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ স্থান কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধমন্দির। বৌদ্ধমন্দিরে গৌতম বৌদ্ধের পায়ের ছাপ রয়েছে। চন্দ্রনাথ মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব মানুষের পছন্দের জায়গা। এটি অবস্থিত পাহাড়চূড়ায়। বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে সিভা চতুর্দশী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

বারো আউলিয়ার মাজার : প্রাচীন বাংলায় এ অঞ্চলে ধর্মপ্রচারক হিসেবে আগমন ঘটে বারো ভূঁইয়ার। বারো আউলিয়ার মৃত্যুর পর তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে গড়ে ওঠে বারো আউলিয়া মাজার। মাজারটি রাস্তার পাশেই।

মিলিটারি একাডেমি :
বিএমএ বা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি অবস্থিত ভাটিয়ারিতে। সারাদেশ থেকে আসা নবীন মিলিটারি সদস্যদের এখানেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

রানী রাসমণি বিচ :
প্রায় বছর তিনেক ধরে এটি জমে উঠেছে। পর্যটকরা এ স্পটটির কথা এখনও তেমন একটা জানেন না। মূলত স্থানীয় জনগণ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষজনই এখানে অবকাশযাপন করতে আসে। কর্ণফুলী নদীর তীরে বিশাল এরিয়া নিয়ে গড়ে উঠেছে এটি। এছাড়া এখানে রয়েছে সুন্দর একটি ঝাউবন।

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত :
সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে দ্বিতীয় কক্সবাজার হচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। এটি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে পৌঁছার আগে চোখে পড়বে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুই পাশে ঝাউগাছের সারি।
জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর : এশিয়া মহাদেশের দুটি জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের একটি অবস্থিত চট্টগ্রামে। এটি নগরীর আগ্রাবাদে অবস্থিত। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। এতে সংরক্ষিত রয়েছে বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, নানা কৃষ্টি-আচার। আরও রয়েছে ভিনদেশী সংস্কৃতির কিছু নমুনা।

ইকোপার্ক :
সীতাকুণ্ড থানার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত ইকোপার্ক। ৯৯৬ একরের এ উঁচু-নিচু পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং নানা ধরনের পশুপাখি। 

ফয়স লেক :
বন্দরনগরীর অন্যতম আকর্ষণ ফয়’স লেক। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে রেলকর্মীদের পানির চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে এলাকাটি। কেউ কেউ এটিকে প্রাকৃতিক লেক ভেবে ভুল করে। আসলে এটি কৃত্রিম লেক। স্থাপিত হয়েছে ১৯২৭ সালে। পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে বিনোদনকেন্দ্র। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে গেছে নাতিদীর্ঘ লেক, লেকের এপারে-ওপারে সৌন্দর্য নিয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড় এ দৃশ্য সহজেই মুগ্ধ করার মতো।
ফয়স লেকের মূল প্রবেশ গেটের বিপরীত দিকেই রয়েছে ইউএসটিসি তথা ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চুয়েট ইঞ্জিনিয়ার ইউনিভার্সিটি। এগুলো ফেলে জাকির হোসেন রোড ধরে মিনিট দুয়েক হাঁটলেই চট্টগ্রাম টেলিভিশন ভবন। ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানই গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ওপর যা  নজরকাড়ার মতো।
এগুলো হাতের ডানদিকে। সিটিভি ছাড়িয়ে সামান্য একটু এগোলেই একাত্তরের বৃহৎ বধ্যভূমি। বধ্যভূমি বর্তমানে বাউন্ডারি করা রয়েছে। বধ্যভূমির পরই ওয়ারলেস নামক একটি জায়গা। এখানে রয়েছে ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি, সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হাঁস-মুরগির খামার। এগুলো ছাড়িয়ে একটু দূরেই বিএডিসি তথা বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। মিনিট দশেক হাঁটার পর চোখে পড়বে নয়নাভিরাম পাহাড়শ্রেণী। এটা ফয়’স লেকের বাউন্ডারি করা পাহাড়েরই অবশিষ্ট অংশ। পার্থক্য হচ্ছে, এখানে উঠতে টিকিট কাটতে হবে না! স্থানীয় জনগণের আন্তরিকতাও মুগ্ধ করবে। একটু সামনে পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ। সম্পূর্ণ কলেজ এবং সুবিশাল ক্যাম্পাস সবই পাহাড়ে। ঝাউতলা থেকে রিকশায় ১০ টাকা ভাড়া পাহাড়তলী পোস্ট অফিস এবং রেলওয়ে স্কুল। এগুলোর সামনেই প্রীতিলতা মনুমেন্ট। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রগণ্য সৈনিক মাস্টারদা সূর্যসেনের সহকর্মী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
এখানে, ইউরোপীয়ান ক্লাবে অবস্থিত অস্ত্রাগার লুণ্ঠন শেষে ধরা পড়ে যান বীরকন্যা প্রীতিলতা। একটি সরু নালায় পা হড়কে পড়ে যান প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তারপর ধরা পড়েন ব্রিটিশদের হাতে। কালের সাক্ষী হিসেবে সেই নালাটি আজও টিকে আছে। তার পাশেই আছে রেলওয়ে জাদুঘর। এটি পাহাড়ের ওপর একটি বাংলোয় অবস্থিত। এ জাদুঘরে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে রেলওয়ে তথা রেলগাড়ির দীর্ঘ ইতিহাস।

শহীদ জিয়া জাদুঘর : এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বিপরীত দিকে একটি শিশুপার্ক। শিশুপার্ক ছাড়িয়ে লালখান বাজার যাওয়ার পথ ধরে সামান্য হাঁটলেই রাস্তার ডানদিকে শহীদ জিয়া জাদুঘর। টিকিট কেটে জাদুঘরে ঢুকতে হয়। সার্কিট হাউসের যে ঘরটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। সেই ঘরের স্মৃতিচিহ্নসহ জিয়াউর রহমান ব্যবহƒত নানা জিনিসপত্র এবং তার বেশকিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে এখানে। রয়েছে চট্টগ্রাম কালুরঘাটে খালকাটা কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানরত অবস্থায় শহীদ জিয়ার একটি ভাস্কর্য।

বাটালি পাহাড় : টাইগার পাস এবং লালখান বাজারের মাঝামাঝি অবস্থান বাটালি পাহাড়ের। বোদ্ধা ব্যক্তিরা বলে থাকেন, চট্টগ্রামের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই টাইগার পাস আসতে হবে এবং বাটালি পাহাড়ে উঠতে হবে। বাটালি পাহাড়ে রয়েছে হরেক রকম গাছপালা। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য পাহাড় কেটে সুবিন্যস্তভাবে তৈরি করা সিঁড়ি। বাটালি পাহাড় থেকে পুরো চট্টগ্রাম দেখা যায়। মনে হবে, পাহাড়ের কোলে গা ঘেঁষে ঘুমাচ্ছে চট্টগ্রাম।

চেরাগী পাহাড় : চেরাগী পাহাড় পত্রিকাপাড়া নামেও পরিচিত। এখানে প্রায় সব জাতীয় পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও চ্যানেল, ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের অফিস রয়েছে। রয়েছে স্থানীয় পত্রিকার অফিসও। চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রাচীন পত্রিকা প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর অফিস এখানেই।
তারপরই আন্দরকিল্লা। আন্দরকিল্লায় রয়েছে শাহী মসজিদ, জেএম সেন হলে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধাপুরুষ মাস্টারদা সূর্যসেনের আবক্ষমূর্তি।
এর একটু দুরেই চকবাজার। যেখানে দুটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সুপ্রাচীন অলি খাঁ মসজিদ ও নানক গুরুদুয়ার।

লালদীঘি : লালদীঘির ময়দান নানা কারণে মানুষের কাছে বহুল পরিচিত। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ স্থল এটি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যে পরিমাণ মানুষ জমায়েত হয় তা বিস্ময়কর। এছাড়া সংগ্রাম-আন্দোলনের অন্যতম, প্রধানতম বললেও ভুল হবে না, সূতিকাগার এটি। ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা এখানেই হয়।

ওয়ার সিমেট্টি : নগরীর প্রবর্তক মোড় পেরিয়ে বাদশা মিয়া রোডে এর অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের একাংশ এখানে সমাহিত করা হয়েছে। ফুলের বাগান বেষ্টিত মনোরম এ স্থান স্মরণ করিয়ে দেয় সেইসব সৈন্যদের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বগাথা। ছোট ছোট সমাধিফলক সারিবদ্ধভাবে সাজানো।

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার : মাতৃভক্তি এবং ধর্মীয় কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন বায়েজিদ বোস্তামী। মাজার পুকুরে রয়েছে দানবাকৃতির অনেকগুলো কাছিম। জনশ্রতি আছে, কাছিমগুলোর বয়স কয়েক শত বছর। এছাড়াও স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিরাজউদ্দৌলা রোডের চন্দনপুরা হামিদিয়া তাজ মসজিদ। প্রায় তিনশ’ বছর আগে নির্মিত এ মসজিদটির সৌন্দর্য এখনও মানুষকে বিমোহিত করে।

পারকি সমুদ্রসৈকত : চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশ দূরেই এটির অবস্থান। আনোয়ারা থানায় গড়ে ওঠা এ নয়নজুড়ানো সমুদ্রসৈকত তেমন একটা পরিচিতি পায়নি। সৈকতের পাড় ঘেঁষে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ঝাউবন। জায়গাটা সবসময় চিকচিক বালিতে ভরে থাকে বলে রসিকজনেরা বলে থাকেন বালুবনে ঝাউবন! সমুদ্রের কথা বাদ দিলেও শুধু ঝাউবনের আকর্ষণে অনেকেই ছুটে যান পারকিতে। সৈকতে সামুদ্রিক কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ নির্মল আনন্দদান করে। রয়েছে নোঙ্গর করা জাহাজ সারি। 

সন্দ্বীপ :
অনেকেই ভুল করে সন্দ্বীপকে নোয়াখালী জেলার অংশ ভাবেন। আসলে এটা চট্টগ্রামেরই একটি থানা। যদিও ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতি অনেকটা নোয়াখালীর মতোই। জলবেষ্টিত এ সুন্দর দ্বীপের আয়তন খুব একটা বেশি নয়, তুলনামূলক জনসংখ্যাও কম। দুইভাবেই সন্দ্বীপ যাওয়া যায়।

বিপ্লব উদ্যান : ষোলশহর দুই নম্বর গেটের আকারে ছোট কিন্তু ছিমছাম পার্ক বিপ্লব উদ্যানের অবস্থান। এটি দর্শনার্থীদের জন্য উš§ুক্ত করে দেয়া হয় বিকাল চারটার পর। নগরবাসীর এবং পর্যটকদের একটুখানি নিঃশ্বাস ফেলার এবং নেয়ার বিশ্বস্ত জায়গা এটি। ফুলবাগান, কয়েক ধরনের গাছের পাশাপাশি প্রধানতম আকর্ষণ স্বাধীনতা ভাস্কর্য।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস :
সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। শিক্ষার কথা বাদ দিলে সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি অদ্বিতীয়। এ সৌন্দর্যের তুলনা নেই। নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পাহাড়ের উপরে স্থাপিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় চারদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। পাহাড় কেটে কেটে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে তা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। দুইপাশে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা যমজ পাহাড়, মাঝখানে পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে সরু রাস্তা। মনোমুগ্ধকর দৃশ্যই বটে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং আকর্ষণ শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে শাটল ট্রেন ব্যবস্থাটি। একমাত্র চট্টগাম ছাড়া দেশের আর কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা নেই। এ শাটল ট্রেনের আড্ডা কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে গেছে। সুযোগ হলে শাটল ট্রেনে চড়ে বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেতে পারে। অবশ্য অছাত্রদের জন্য শাটল ট্রেনে চড়ার বিধিসম্মত কোন ব্যবস্থা নেই!

পাহাড় আর হ্রদের মিতালি ফয়’স লেক 

ঈদের আনন্দ ও খুশির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে চট্টগ্রামে অবস্থিত বিনোদনকেন্দ্র ফয়’স লেক কনকর্ড, সী ওয়ার্ল্ড কনকর্ড ও ফয়’স লেক রিসোর্ট সেজেছে ঈদের সাজে।
অবারিত সবুজের বুক চিড়ে জেগে ওঠা বিস্ময়কর ফয়’স লেক। এই বিশ্বমানের পার্ক ফয়’স লেকে কনকর্ড রিসোর্টস এবং হানিমুন শ্যালে, যা দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চট্টগ্রাম শহরের মাঝে শহরের বৃহত্তম এলাকা জিইসি মোড় থেকে ২ মিনিটের দূরত্বে এবং জাকির হোসেন রোডের পাশেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে  হ্রদ-পাহাড় ও স্বচ্ছ পানির সমন্বয়ে ফয়’স লেক।
নান্দনিক স্থাপত্য, সুবিশাল পাহাড় আর লেকের সমন্বয়ে গড়ে তোলা এই পার্কে রয়েছে বিভিন্ন রাইডস; যেমন সার্কাস ট্রেন, ফ্যামিলি কোস্টার, ক্যারাওয়াল ফেরিস হুইল, রেড ড্রাই স্লাইড, ইয়েলো ড্রাই স্লাইড, বাম্পার কার, হ্যাপি ডাম্পস সার্কাস সুইং। নৌ ভ্রমণের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় নৌকা, প্যাডেল বোট ও ইলেকট্রিক মোটর বোট। পাহাড়ের বনাঞ্চলে ট্রাকিংয়ের জন্য রয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সুউচ্চ টাওয়ার। লাঞ্চ ও ডিনারের জন্য আধুনিক রেস্তোরাঁ ‘লেক ভিউ’। দেশি-বিদেশি খাবার ও ফাস্টফুডের জন্য বিভিন্ন ফুড ফিউস। দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখর থাকে ফয়’স লেক। বিশেষ দিনগুলোতে কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এখানে আপনার জন্য রয়েছে সপরিবারে, একান্তে, সদলবলে, সহকর্মীদের নিয়ে সময় কাটানোর অপূর্ব সুযোগ।
ফয়’স লেক রিসোর্ট
পাহাড়ের গা ঘেঁষে নিরিবিলি পরিবেশে অনুপম নির্মাণশৈলী, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক মান ও সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কনকর্ড গড়ে তুলেছে ফয়’স লেক রিসোর্ট। হানিমুন শ্যালে, গোল্ড ও প্লাটিনাম এই তিন ক্যাটিগরির রুম রয়েছে রিসোর্টে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, রিসোর্টে যেতে হবে স্পিডবোটে। রিসোর্ট গেস্টদের লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে প্যাডেল বোট। রিসোর্টের ব্যালকনি থেকে উপভোগ করা যাবে স্বচ্ছ জলরাশি, সবুজ পাহাড়, ছুটে চলা হরিণ, বুনো খরগোশ, নানা রকম পাখি। রিসোর্ট সংলগ্ন রয়েছে ফ্লোটিং রেস্তোরাঁ, যেখানে বসে সারা যাবে চা-কফির আড্ডা। এখানে আপনার ভ্রমণ ও একান্ত বিশ্রামকে মোহময় করে তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই রয়েছে। এ অভিনব রোমাঞ্চকর সুযোগ আবিষ্কারের জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এই রিসোর্ট, যেখানে পাখপাখালির ডাকে আপনার ঘুম ভাঙবে, স্বচ্ছ পানি, নিবিড় বনের আচ্ছাদনে একাকী দাঁড়ানো নিঃসঙ্গ পাহাড়ের বিচিত্র দিক দৃশ্যাবলি অনাবিল রোমাঞ্চের মোহ।
সী ওয়ার্ল্ড কনকর্ড 

আধুনিক স্থাপত্যশৈলী,পাহাড় ও হ্রদের অপরূপ সৌন্দর্যে বিনোদনের নানা আয়োজনে ভরপুর দেশের সর্ববৃহত্ ওয়াটার পার্ক সী ওয়ার্ল্ড কনকর্ড। দর্শনার্থীদের বিনোদনের কথা লক্ষ করে কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কো. লি. মজাদার সব রাইড নিয়ে গড়ে তুলেছে সী ওয়ার্ল্ড। বিনোদনপিপাসু দর্শনার্থীদের জন্য এসব পানিভিত্তিক রাইড অত্যন্ত রোমাঞ্চকর আর চমকে পরিপূর্ণ। পানির সঙ্গে হরেক রকম উত্তেজনাকর এই রাইড সবই আধুনিক বিশ্বমানের আদলে গড়া।  ফয়’স লেকের স্বচ্ছ জলরাশির বুক চিড়ে মোটর বোটে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই সী ওয়ার্ল্ডে দেখা মিলবে দারুণ রোমাঞ্চকর, মনোমুগ্ধকর নানা আয়োজন।
সী ওয়ার্ল্ডের রাইডসের মধ্যে রয়েছে ওয়েভপুল, স্লাইড ওয়ার্ল্ড, ফ্যামিলিপুল, টিউব স্লাইডস, মাল্টি স্লাইডস, ওয়াটার ফল, ডোম স্লাইডস ও প্লে-জোন ও ড্যান্সিং জোন। দর্শনার্থীরা এখানে পাবেন সাগরের বিশাল ঢেউয়ের হাতছানি। সাগরের মতোই কৃত্রিমভাবে ঢেউ আছড়ে পড়ে। ওয়েভপুলের ঢেউ আর গানের তালে মেতে ওঠে তরুণ-তরুণীরা। পার্কের দ্বিতীয় আকর্ষণীয় রাইড হচ্ছে ড্যান্সিং জোন। এখানে কৃত্রিম বৃষ্টির পানিতে ভিজে ও গানের সঙ্গে নেচে নির্মল আনন্দ পান পর্যটকরা। দিনভর পানিমেলায় মেতে থাকার সব আয়োজন রয়েছে ওয়াটার পার্কে। ফয়’স লেক ও পাহাড়ের গা ঘেঁষে করা সী ওয়ার্ল্ডের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে।
প্রতিদিন এই পার্কটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। আর যে কোনো ছুটির  দিন খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এখানে সব ধরনের সুব্যবস্থা আছে। যেমন মহিলা ও পুরুষের জন্য আলাদা চেঞ্জ রুম, আলাদা লকারের ব্যবস্থা, অতিরিক্ত কাপড়, তোয়ালে ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও এখানে রয়েছে বিশ্বমানের সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা, যা ভ্রমণার্থীদের দেবে জিভে পানি আনা স্বাদ। যোগাযোগ : ৮৮৩৩৭৮৬, ৯৮৯৬৪৮২, ৭৭০৭৯৪৬-৪৯, ০১৯১৩-৫৩১৩৮০, ০১৯১৩-৫৩১৪১৯, ০১৯১৩-৫৩১৩৮১।

জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘর(চট্রগ্রাম) 

জাতির বৈচিত্র্যময় নিদর্শন নিয়ে এশিয়া মহাদেশে জাতিতত্ত্ব বিষয়ক যে ক’টি জাদুঘর রয়েছে তার মধ্যে চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটিই সামগ্রিকভাবে উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতির বৈচিত্র্যময় পার্বত্য এলাকায় সুদূর অতীতকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠীর বিশেষ একটি অংশ নিভৃত জীবনযাপন করে আসছে। তাদের মধ্যে অনেকে আজও নিজ নিজ ঐতিহ্যগত জীবনধারা অব্যাহত রেখেছে। দেশের মূল ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জীবনধারার সঙ্গে এর যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে সভ্যতার পরিধি ততই দ্রুততার সঙ্গে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তারা আরও আধুনিক হচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বৈচিত্র্যময় জীবনধারার অনেক ঐতিহ্যই এখন বিলীনের পথে। তেমনি মূল ভূখণ্ডে বসবাসকারী বাংলাভাষী বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো সেসব বৈচিত্র্যময় জীবনধারার অধিকারী প্রতিবেশীদের ঐতিহ্য সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে জানে না। অথচ তারাও এই দেশের জাতীয়তার একটি বিশেষ অংশ। ফলে স্বাভাবিকই বিচিত্র এ জীবনধারা সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রত্যেকেরই সৃষ্টি হয়। এই দেশে বসবাসরত সেসব জনগোষ্ঠী, আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্প্রীতি নিবিড় করে তোলার উদ্দেশ্য নিয়েই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তুলনামূলকভাবে এর পরিধির সম্প্রসারণ না হলেও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আরও আধুনিকায়ন ও পরিধি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। নান্দনিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশে আগ্রাবাদের বাণিজ্যিক এলাকায় স্থাপিত হয়েছে জাতিতত্ত্ব বিষয়ক এ জাদুঘরটি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধুনিক জীবনব্যবস্থা জাগরণের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিবর্তনের চাকা ক্রমেই দ্রুততর গতি লাভ করছে। ফলে আজকের অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লিখিত বহু লোকায়ত বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটি তা সংরক্ষণে যথাযথ ভূমিকা রেখে আসছে। জাদুঘরের প্রদর্শনীতে এমন সব নিদর্শন স্থান লাভ করেছে যেগুলো সংশ্লিষ্ট জাতি, জনগোষ্ঠী, আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠীগুলোর একটা সামগ্রিক পরিচিতির প্রতিনিধিত্ব বহন করে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এখানে রয়েছে মানচিত্র, আলোকচিত্র, মডেল, কৃত্রিম পরিবেশ, দেয়ালচিত্র, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ফলক ইত্যাদি। জাদুঘরে শুধু দেশি-বিদেশি দর্শকদের জ্ঞানানুসন্ধানের আকাক্সক্ষাই পূর্ণ করে না, সব শ্রেণীর দর্শনার্থীদের বিপুল আনন্দেরও খোরাক জোগায়। এছাড়া আয়তনের বিচারেও এই প্রতিষ্ঠানটি এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত এ ধরনের জাদুঘরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানের দাবিদার। জাদুঘরের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবন বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন আদিবাসীর জীবনপ্রণালী সংক্রান্ত প্রদর্শনীতে রয়েছে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, খুমি, চাক, তঞ্চঙ্গ্যা, রাখাইন, লুসাই, পাংখো, মনিপুরী, খাসিয়া, বোনা, পাওন, গারো, হাজং, দালু, কোচ, সাঁওতাল, ওরাং, রাজবংশী, বাগদি ইত্যাদি আদিবাসী।
প্রদর্শিত হচ্ছে যা : জাদুঘরের প্রদর্শনীতে এ যাবৎ দেশ-বিদেশের মোট একটি জাতি, বারটি জনগোষ্ঠী এবং ছাব্বিশটি মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসীর বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রার বিবিধ বৈশিষ্ট্য স্থান পেয়েছে জাদুঘরে। এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দৈহিক গড়ন, প্রাকৃতিক পরিবেশ, ঘরোয়া জীবন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য, উৎসব, নাচগান, অলংকার, ধর্মীয় কার্যাবলী, শিকার, হস্তশিল্প ইত্যাদি অন্যতম। ফলে জাদুঘরটি পরিদর্শনের মাধ্যমে বর্তমানে দেশি-বিদেশি দর্শক বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের জাতিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটি ধারণা অর্জন করতে পারে।
যেসব জাতি, জনগোষ্ঠী, মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসী জাদুঘরে স্থান লাভ করেছে, বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো (বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম) এবং চট্টগ্রামের উত্তর ও পূর্বাংশ চাকমা (চাঙমা), মারমা (মগ), ত্রিপুরা (টিপরা), কক্সবাজার ও পটুয়াখালী পার্বত্য জেলার রাইখান (রাখাইন), মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসী চাক (শাক), তঞ্চঙ্গ্যা (টংচঙ্গা বা দৈনাক), মুরং (ম্রো), লুসাই মিজো), পাঙ্খো (পাংখো), বম (বনযোগী), খ্যাং (খিয়াং), খুমি (কুমি); ঢাকা বিভাগের উত্তরাংশের জনগোষ্ঠী গারো, মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসী হাজং, কোচ, দালু, মান্দাই; উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনগোষ্ঠী মনিপুরি, খাসিয়া জনগোষ্ঠী ও আদিবাসী বোনা, কুকী; পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী বিভাগ)-এর মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের মধ্যে সাঁওতাল, বাবুবলী, রাজবংশী, ওঁরাও, পলিয়া। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জনগোষ্ঠী পাঠান, সিন্ধুর সিন্ধি, পাঞ্জাবের পাঞ্জাবি। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চল (কাফিরিস্তান)-এর কাফি, সোয়াত-এর সোয়াত। ভারত অরুণাচল, মধ্যপ্রদেশ-এর আদি, ফুত্তয়া, মুরিয়া, মিজোরাম-এর মিজো। রাশিয়া কিরগিজ অঞ্চলের কিরগিজ এবং অস্ট্রেলিয়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসী অস্ট্রাল উল্লেখযোগ্য।
পার্বত্য জেলাগুলোর ভিন্নতর অস্তিত্ব ও অঞ্চলের নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় মানুষ বসবাস করে আসছে, এদের মধ্যে নিুোক্ত জনগোষ্ঠী ও মৌলগোষ্ঠী প্রধান। জাদুঘরে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্যজেলাগুলোর ব্যবহত আচার-অনুষ্ঠান ও উৎপন্ন দ্রব্যাদির মধ্যে দেখা যায় চাকমাদের মাচাংঘর (বাঁশের উঁচু খুুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত মাচার উপর বাঁশের বেড়া ও খড়ের চালা দিয়ে আচ্ছাদিত ঘর) বানিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় বা ঢালে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। দ্রব্যাদির মধ্যে দেখা যায় : বড়গি (ঘুমানোর সময় গায়ে দেয়ার চাদর), বিচন কাপড় (বিছানার চাদর), হেংগর (বাঁশের বাঁশি), মাখলা (মাথাল), কুরুম (ছোটঝুড়ি), সাগা (জমির অধিকার চিহ্ন), কুল (ডালা), দুদুক (বাদ্যযন্ত্র), হেনী (বাঁশি), ছেন্দা (বেহালা), চামপ্রং (সারিন্দা), সেরি (মাপনী), বাল্লা (বাঁশি), ফি (বর্শা), কুরুল (কুঠার), আগল (দা), ওয়াইতি (জঙ্গল পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহƒত দা), হাইতি (দোল), ওগই (বড় হামানদিস্তা), মেঝাং (বেতের তৈরি খাবার ছোট টেবিল) ইত্যাদি।

পৃথিবীর খ্যাত ও অখ্যাত অসংখ্য জাতি, জনগোষ্ঠী, আদিবাসী ও মৌলগোষ্ঠীর নানান বৈচিত্র্যময় নিদর্শনে ভরপুর জাদুঘরটি চার দশক পেরিয়ে আসলেও আরও অধিকতর আদিবাসীদের নিদর্শনাদি সংগ্রহের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জাদুঘরের উপকরণগুলোকে দেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যায়। আজ থেকে তিন যুগ আগের সেই সংগৃহীত নিদর্শনাদি নিয়ে আধুনিক মিউজিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দেয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে, মোটামুটি দৃষ্টিনন্দন হতে পারে তার জন্য জাদুঘরের নিয়মিত পরিচর্যা করা উচিত। জাদুঘরটি সম্পূর্ণভাবে পিডিবির বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল, বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলে দর্শকদের জাদুঘর পরিদর্শনে বিঘœ ঘটে। জেনারেটরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে কর্তৃপক্ষ। জাদুঘরে প্রতিদিনই সমাগম ঘটে শত শত দর্শনার্থীর। নাগরিক কোলাহলের বিমর্ষতা ছেদ করে প্রিয়জনদের নিয়ে ছুটে আসে এই জাদুঘরে; নিঃশ্বাস ফেলে স্বস্তির, উপলব্ধি ও দেখে নেয় আদিবাসী ও নানান জনগোষ্ঠীর অজানা জীবনবৈচিত্র্য। ওই সব জাতিগোষ্ঠীর দৈহিক গড়ন, ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, বিশ্বাস ও জীবনযাত্রার ধরন সম্পর্কে জানা যায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে। কিছু কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উদ্ভব, বিকাশ এবং পারস্পরিক জ্ঞাতিত্বের বিষয়ে একটি রূপরেখা নির্ণয় করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। বিচিত্র জাতির এ বৈচিত্র্যময় জীবনব্যবস্থা সহজেই আকর্ষণীয়। নৃতত্ত্ব শাস্ত্রের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন শাখা নিয়ে জাদুঘরে নিয়মিত প্রদর্শনীর ব্যবস্থা যা সব শ্রেণীর দর্শকের কাছে একটি বিশেষ বিষয়কে সহজবোধ্য এবং উপভোগ্য করে তোলে। এক তলাবিশিষ্ট এবং দক্ষিণমুখী এই জাদুঘরে বর্তমানে একটি কেন্দ্রীয় হলঘরসহ মোট চারটি গ্যালারি রয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে দুটি করে জাদুঘরে মোট এগারটি কক্ষ রয়েছে। ভবনের সম্মুখভাগের মধ্যবর্তী স্থানে পাশাপাশি রয়েছে দুটি ফটক। জাদুঘরে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে বাম দিকের ফটকটি অতিক্রম করলে প্রথমেই পড়বে বুকিং কাউন্টার। জাদুঘরে টিকিটের হার ১০ টাকা। চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনা, জাদুঘরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিবাসী, জনগোষ্ঠী ও মৌলগোষ্ঠীর অবস্থান সম্পর্কে মানচিত্রের নির্দেশনা দেখতে পাওয়া যায়। এরপর বুকিং কাউন্টার ছেড়ে সোজা উত্তর দিকে অগ্রসর হলে বাম দিকের প্রথম দরজা দিয়ে ১ নং গ্যালারিতে প্রবেশ করা যায়। সর্বপ্রথম গ্যালারি এক-এর ‘ক’ কক্ষে দেখা যায় পৃথিবীর কয়েকটি দেশের কিছুসংখ্যক জনগোষ্ঠী ও বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর লোকায়ত জীবনব্যবস্থার প্রতিনিধিত্বকারী দ্রব্যাদি ও মডেল। যাতে রয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ প্রভৃতি দেশের কয়েকটি জনগোষ্ঠীসহ মৌলগোষ্ঠীর স্বল্পসংখ্যক জাতিতাত্ত্বিক নিদর্শন। এছাড়া জার্মান প্রাচীরের কিছু ধ্বংসাবশেষ, এক এর ‘খ’ কক্ষটিতে পাকিস্তানে বসবাসকারী পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পাঠান, সোয়াতিগণের জীবনব্যবস্থার ধরন ও নিদর্শনাদি রয়েছে। গ্যালারি দুই-এর সম্মুখ ভাগের দুই ‘ক’ কক্ষটিতে গেলেই দেখতে পাবেন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বসবাসকারী মনিপুরী, খাসিয়া ও পাঙনদের পরিচিতি। ‘খ’ কক্ষটিতে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী গারো, সাঁওতাল, রাজবংশী, ওঁরাও, ৩ নং কক্ষে রয়েছে ম্রো, ত্রিপুরা, খ্যাং, বম, চাক, পাংখোদের জীবনব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।

চার নং কক্ষের দক্ষিণ দেয়ালের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত কক্ষে রয়েছে মারমা, চাক ও চাকমা জীবনব্যবস্থার বিভিন্ন দিক, রয়েছে টেবিল আকৃতির আধার ও দুটি মাচাংঘর। কেন্দ্রীয় কক্ষের আধারগুলোতে প্রধানত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, মৌলগোষ্ঠী ও অধিবাসীদের অলংকারাদি। উত্তর দেয়ালে রয়েছে আকর্ষণীয় ডায়োরমার সাহায্যে প্রাকৃতিক ও গৃহ পরিবেশের সান্নিধ্যে মুরং গো-হত্যা উৎসবের মডেল। এছাড়াও দেয়ালের উপরাংশে সারিবদ্ধভাবে ইতালির শিল্পী ভি. ক্যারলি চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও তৎকালীন পাকিস্তানের বিভিন্ন মৌলগোষ্ঠী ও জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দৃশ্য।
ঊনবিংশ শতকের ষাটের দশকের গোড়ার দিকে জাদুঘর ভবনের প্রথম পর্বের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওই সময় ভবনটির মধ্যবর্তী স্থানে দক্ষিণ দিক হতে প্রবেশযোগ্য ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি হলঘর এবং এর পশ্চিম ও পূর্বাংশের প্রতিটি দিকে পাশাপাশি দুটি করে হলঘরমুখী মোট চারটি গ্যালারি নির্মিত হয়েছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের গ্যালারিটি ‘১’, উত্তর-পশ্চিমাংশের গ্যালারিটি ‘২’, উত্তর-পূর্বের গ্যালারিটি ‘৩’ এবং দক্ষিণ-পূর্বের গ্যালারিটি ‘৪’ সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত হতো। উল্লেখ্য, প্রতিটি গ্যালারিতে তখন মাত্র একটি করে কক্ষ ছিল। এই কক্ষগুলোর পরিচিতি যথাক্রমে ১ক, ২ক, ৩ক এবং ৪ক। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৭ সালে প্রথম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সম্প্র্রসারণের পদক্ষেপ নেয়া হলে কক্ষ ১খ, ২খ, ৩খ ও ৪খ (অর্থাৎ আরও চারটি নতুন কক্ষ) নির্মিত হয়। ১৯৮৫-৯০ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাধীনে পূর্বাংশের গ্যালারি দুটির (৩ ও ৪) প্রতিটিতে আরও একটি করে মোট দুটি কক্ষ (৩গ ও ৪গ) নির্মিত হয়। আরও দুটি কক্ষ নির্মাণ সমাপ্ত হলে জাদুঘরে পূর্ণাঙ্গতা পাবে। নব্বই দশকের শুরু থেকে জাদুঘরের প্রদর্শনী ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন শুরু হতে থাকে। ফলে কক্ষ ১ক এর কয়েকটি প্রদর্শনীতে নতুন কয়েকটি দেশের কিছু জনগোষ্ঠী ও মৌলগোষ্ঠীর বাংলাভাষীর প্রতিনিধিত্বকারী কিছু লোকায়ত নিদর্শন প্রদর্শনী শুরু হয়। তবে লক্ষণীয়, জাদুঘর ভবনটির নির্মাণকাজ আজও সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত হয়নি। ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জাতি, জনগোষ্ঠী, মৌলগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের জীবনধারণের বিভিন্ন দিক প্রদর্শন করার সংস্থান করে জাদুঘরটিকে আরও তাৎপর্যময় করা তোলা প্রয়োজন।
নৃতত্ত্ববিষয়ক এ জাদুঘরটি যথাযথ পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। তথ্য-প্রযুক্তির নানা বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হওয়াও প্রয়োজন। যা সংরক্ষণ ও উপস্থাপনে আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। জাদুঘরটির অবস্থান চট্টগ্রাম শহরের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই সহজ।
চট্টগ্রাম রেল বাস স্টেশন, বিমানবন্দর বা স্টেশন থেকে যে কোনও পরিবহনে অল্প সময়ে পরিদর্শনের জন্য আসা যায় জাদুঘরে।
কিভাবে যাওয়া যায়: 

উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।

কাপ্তাই লেক 


১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মানের ফলে সৃষ্টি হয় সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ। মূলত পানি বিদু্ৎ উৎপাদনের জন্য এই বাঁধ নির্মিত হয়।অসংখ্যপাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা আকাবাঁকা বিশাল কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহারে ভীষনআনন্দ জাগায়। এতে করে অনুভূত হবে রোমাঞ্চকর অনুভূতিরও । দেশীয় ইঞ্জিননৌকা,লঞ্চ, স্পিডবোটে দিনভর নৌবিহার করা যেতে পারে। ভাড়া লাগবে ৬০০ থেকে ১৬০০টাকা।

কিভাবে যাওয়া যায়: 

উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

পতেঙ্গা চট্টগ্রাম শহরের ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি সমূদ্র সৈকত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। পতেঙ্গা চট্টগ্রাম শহরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণীঝড়ে এই সৈকতটি ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে সমূদ্র সৈকতে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা বেড়ি বাঁধ দেয়া হয়েছে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি বিএনএস ঈসা খান পতেঙ্গার সন্নিকটে অবস্থিত। এছারা চট্টগ্রাম বন্দর এর অনেক জেটি এইখানে অবস্থিত।

কিভাবে যাওয়া যায়: 
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে। 


চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি

 

কমনওয়েলথ ওয়ার সেমেট্রি চট্টগ্রামকমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনেরএকটি সৌধ যেটি সাধারনভাবে চট্টগ্রাম ওয়ার সেমেট্রি নামে পরিচিত।

অবস্থান

কমনওয়েলথ ওয়ার সেমেট্রি চট্টগ্রামেরদামপাড়া এলাকায়, ১৯ নং বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ২২ কিমি উত্তরে এবং চট্টগ্রাম বন্দরথেকে ৮ কিমি দূরে অবস্থিত। ওয়ার সেমেট্রির প্রতিষ্ঠাকালে এই এলাকাটি একটি বিশাল ধানের ক্ষেত ছিল, যদিও বর্তমানে এটি বেশ উন্নত এলাকা এবং শহরের প্রানকেন্দ্র হিসেবে পরিগনিত।

ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী চট্টগ্রাম ওয়ার সেমেট্রি প্রতিষ্ঠা করে। সূচনালগ্নে এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রায় ৪০০টি কবর ছিল। তবে বর্তমানে এখানে ৭৩১ টি কবর বিদ্যমান যার ১৭টি অজানা ব্যক্তির। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাতীয় বিদেশী সৈন্যদের প্রায় ২০টি (১জন ডাচ এবং ১৯জন জাপানি) সমাধি বিদ্যমান। এছাড়া এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) চট্টগ্রাম-বোম্বের একটি স্মারক বিদ্যামান।

সমাধিসমূহ

পেশা অনুসারে

  • ৫২৪ জন সৈন্য
  • ১৯৪ জন বৈমানিক
  • ১৩ জন নাবিক

এলাকা অনুসারে

  • যুক্তরাজ্য - ৩৭৮
  • কানাডা - ২৫
  • অস্ট্রেলিয়া - ৯
  • নিউজিল্যান্ড - ২
  • অবিভক্ত ভারত ২১৪
  • পূর্ব আফ্রিকা - ১১
  • পশ্চিম আফ্রিকা - ৯০
  • বার্মা - ২


কিভাবে যাওয়া যায়: 

উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাটালী হিল

বাটালী হিল চট্টগ্রামের মূল কেন্দ্রে অবস্থিত বাটালী হিল। এটি চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উচু পাহাড়। উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুট।চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ কেন্দ্রের লালখান বাজার এলাকার ইস্পাহানী মোড়েরউত্তরে ফাহিম মিউজিকের পাশ ঘেষে এবং ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর পিছন দিয়ে পিচঢালা পথ বেয়ে উপরে দিকে উঠে গেছে বাটালী হিলের রাস্তা। এই বাটালী হিল আবার‘জিলাপি পাহাড়’ নামেও পরিচিত। এর কারণ হচ্ছে- পাহাড়ে উঠার রাস্তাটিজিলাপির প্যাঁচের মত আঁকা-বাঁকা পথ বেয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে, এর ফলেপাহাড়ের চূড়ায় উঠার সময় অন্যরকম একটা চমৎকার অনুভূতি হয়।সর্বোচ্চ চূড়াটিকে বলা হয়- শতায়ু অঙ্গন। বাটালী হিলের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠলে পুরো চট্টগ্রাম শহর দেখা যায়।

কিভাবে যাওয়া যায়: 
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে। 



বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারচট্টগ্রাম এর নাসিরাবাদের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে উঠা এই মাজার চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান।
বর্ণনা
এই সমাধির অবয়ব সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে আবিস্কার করা হয়। আঙ্গিনার ঠিক মাঝামাঝি একটি শবাধার অবস্থিত। পরবর্তীতে সমাধিস্থলটি আধুনিক কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ মোঘলরীতির আয়তাকার মসজিদ এবং একটি বিশালাকার দীঘি আছে। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয় মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আমলে মসজিদটি নির্মিত।
জনশ্রুতি
যদিও বায়েজিদ বোস্তামীর নাম অনুসারে এই মাজার, ইরানের বিখ্যাত সুফী বায়েজিদ বোস্তামীর এই অঞ্চলে আগমনের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়না। ধারণা করা হয় সুফী সাধক ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর পাহাড় এর উপরে কিংবা জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন এবং এসব জায়গাতে মাজার কিংবা এই ধরণের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারটাও মূলত উনাকে উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ মাত্র।
যদিও এলাকার জনশ্রূতি অনুযায়ী বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস শুনতে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে অবস্থানের পরে প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাবার অনুরোধ করলে উনি তাদের ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেঁটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন এবং ঐ স্থানে উনার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান। এই জনশ্রুতির স্বপক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ করা হয় যেখানে শাহ সুলতান নামক একজন মনীষির নাম বর্ণিত আছে। বায়েজীদ বোস্তামীকে যেহেতু সুলতান উল আরেফীন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় যেই সূত্রে এই শাহ সুলতান আর সুলতান উল আরেফীন কে একই ব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
বোস্তামীর কাছিম
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের পাদদেশে একটি সুবিশাল দীঘি অবস্থিত। এর বাসিন্দা হিসাবে বোস্তামীর কাছিম ও গজার মাছ সুবিখ্যাত। আঞ্চলিকভাবে এদের মাজারী ও গজারী বলে আখ্যায়িত করা হয়। বোস্তামীর কাছিম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার প্রাঙ্গন ব্যতীত বিশ্বের আর কোথাও এদের দেখা মিলে না। মাজারের দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা মাজার তত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শো থেকে সাড়ে তিনশো কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রজনন মৌসুমে মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়।
মাজারের ভক্তকূল ও আঞ্চলিক জনশ্রূতি অনুযায়ী মাজার প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন এবং পাপীষ্ঠ আত্মার পদচারণা ছিলো। বায়েজিদ বোস্তামী তার এই অঞ্চলে ভ্রমনকালে এইসব দুষ্ট আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন এবং আজীবন পুকুরে বসবাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
কিভাবে যাওয়া যায়: 

উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।

লালদীঘি


লালদিঘিবাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থান সমূহের অন্যতম। নগরীর জেল রোডের শেষ সীমানায় এর অবস্থান। এর একপাশে আছে আন্দরকিল্লা। এর আশেপাশে আছে জেলা পরিষদ ভবন এবং স্থানীয় ব্যাঙ্কের শাখাসমূহ। এটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত।
ইতিহাস
১৭৬১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের শাসনভার লাভ করে। সেই সময় এন্তেকালী কাছারি অর্থাৎ জমি সংক্রান্ত তহসিল অফিসে (বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস) লাল রঙ দেয়া হয়েছিল। এটিকে লোকজন তাই “লালকুঠি” বলে চিনত। এই লাল কুঠির পুর্ব দিকে ছিল জেলখানা। এটিকে ও লাল রঙ করা হয়েছিল এবং তাই এটি “লালঘর” নামে পরিচিতি লাভ করে। এই ভবন দুটো লাল পাগড়ী পরিহিত ব্রিটিশ পাহাড়াদারেরা পাহাড়া দিত। অনেকেই মনে করেন এ কারনেই ভবনগুলোর নাম লাল ঘর এবং লাল কুঠি। লাল ঘর এবং লাল কুঠির পাশে একটা ছোট পুকুর ছিলো। চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসনের সূচনালগ্ণে পুকুরটিকে বড় করে দিঘিতে পরিণত করা হয়। পাশেই দুটো লাল রঙের ভবন ছিল বলেই এই দিঘিটা লালদিঘি নামে পরিচিত হয়।
লালদিঘির মালিকানা
লালদিঘির উত্তর পাশে রয়েছে একটা মঠ যার গম্বুজে লেখা আছে ১৯৩৯ সাল। এটার গায়ে লেখা আছে রায় বাহাদুর রাজকমল ঘোষের নাম। রায় বাহাদুর ছিলেন একজন জমিদার। তাঁর নিজ বাড়ি ছিল রাউজান উপজেলার চিকদাইর গ্রামে। তিনি অবসর সময় কাটাতেন তখনকার খোলামেলা লালদিঘির পাড়ে। তিনি ছিলেন লালদিঘির অভিভাবক। পরবর্তিতে তিনি দিঘিটির মালিকানা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হাতে তুলে দেন।
রিকেট ঘাট
লালদিঘির পশ্চিম পাড়ে ছিলো “রিকেট ঘাট”। ১৯৪১ হতে ১৯৪৮ পর্যন্ত চট্টগ্রামের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করা স্যার হেনরী রিকেটস এর স্বরণে চট্টগ্রামের জমিদারেরা এই ঘাট নির্মান করেছিলেন। মিঃ হার্ভে ১৮৩১-১৮৩৯ সালে চট্টগ্রামের কালেক্টর ছিলেন। তিনি ৩২ ডেপুটি কালেক্টর ও কয়েকজন জরিপ আমিন নিয়ে জরিপের কাজ শুরু করেন। জরিপে তিনি ২০ গন্ডার স্থলে ১৮ গন্ডায় কানি হিসাব করেন। একারনে তাঁর উপর সবাই এত অসন্তুষ্ট হয়েছিল যে আনোয়ারা থানায় লোকজন তাকে আক্রমণ করে। তিনি তারপর সৈন্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন। এই খবর পেয়ে কর্ত্‌পক্ষ মিঃ রিকেটকে প্রেরণ করে। ১২০০ মঘীর জরিপের সময় চট্টগ্রাম বাসীর উপকার করে তিনি সকলের শ্রদ্ধাভাজন হয়েছিলেন। ঊনবিংশ শতকে চট্টগ্রামের সেশন জজ টোডেল সাহেবের মৃত্যুর পর তাঁর শবদেহ রিকেট ঘাটের উত্তর দিকে দাহ করা হয়। তাঁর স্মৃতিতে নির্মান করা স্তম্ভটি পরবর্তীকালে ভেঙ্গে ফেলা হয়।
লালদিঘির ময়দান
মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পশ্চিমে পরীর পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত পুরো জায়গাটা সেকালে মিউনিসিপাল ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৮৮৭ সালে এই ময়দানে মহারানী ভিক্টোরিয়ার মূর্তি স্থাপন করা হয়। চল্লিশের দশকে স্বাধীনতা আন্দোলনের যুগে এই মূর্তি অপসারন করা হয়। ঊনবিংশ শতকের শেষে উত্তর-দক্ষিন রাস্তাটি হবার পর মিউনিসিপাল ময়দান দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব দিক সাধারন জনগনের খেলার মাঠে রূপান্তরিত হয়। মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তখন সে মাঠ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পরিনত হয়। এই মাঠ এখন লালদিঘির মাঠ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
লালদিঘির কিংবদন্তি
লাল দীঘির ঘটনা নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষের মুখে একটা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। একবার এক দিনমজুরের মেয়ে ঐ দিঘীতে গোছল করতে নেমেছিলো। হঠাৎ পায়ে শিকল বেঁধে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো জলের নিচে একটা দেশে। আসলে ঐটা ছিলো এক বাদশার দরবার। সেই বাদশার বিয়ে ঠিক হয়েছিল লাল বেগমের সাথে। একদিন বাদশা লাল বেগমকে দেখতে চাইলেন কিন্তু খবর পাওয়া গেলো লাল বেগম তার মুল্লক থেকে এক ক্রীতদাসের সাথে পালিয়েছে। এ খবর বাদশা তখন জানতেন না। তাই মজুরের ঐ মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে বাদশার সাথে লাল বেগমের অভিনয় করার জন্য। অনেক কথাপ্রসঙ্গে বাদশা মেয়েটার আসল পরিচয় জেনে যায়। ক্ষুদ্ধ বাদশার নির্দেশে সবাই আসল লাল বেগমকে খুজতে লেগে গেলো। তখন জানা গেলো সে অন্দর কিল্লার দীঘি থেকে দু’শ হাত দূরে পর্তুগীজদের কিল্লায় আছে। বাদশা ঐ কিল্লায় আক্রমণ করে। অনেক অনেক খুনে লাল হয়ে গেলো দিঘীর পানি। বাদশা পরাজিত হল সেই যুদ্ধে। সবাই পালিয়ে গেল। তবুও সে দিঘির পাড়ে বাদশা থেকে গেল লাল বেগমকে উদ্ধার করার আশা নিয়ে। এই নিয়ে একজন চারন কবি লিখেছেনঃ “লালদিঘিতে আগুন ধরে/জল শুকিয়ে গিয়েছে,/মাছগুলো সব ডাঙ্গায় উঠে/কিলবিল করতে লেগেছে“।
অনুষ্ঠান
লালদিঘির পাড়ে ১৯১০ সালে বৈশাখের ১২ তারিখ আবদুল জব্বার সর্বপ্রথম বলীখেলা অনুষ্ঠান করেন। তখন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের ১২ তারিখ লালদিঘির পাড়ে জব্বারের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।[ বর্তমানে লালদিঘির পশ্চিম পাড়ে একটি মসজিদ আছে। শহরবাসীর চিত্তবিনোদনের জন্য এখানে একটি সবুজ গাছপালা ঘেরা পার্ক আছে।
কিভাবে যাওয়া যায়: 
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভাটিয়ারী

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে গড়ে ওঠা ভাটিয়ারীগলফ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব দেশের প্রায় ১২টি গলফ ক্লাবের মধ্যে সেরা। সুবিশাল আয়তনের ও প্রাকৃতিক সোন্দর্যের অধিকারী এ ক্লাবের সদস্য প্রায় ৮শ’।চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরেই ভাটিয়ারী গলফ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবটি প্রকৃতিকে জড়িয়ে রেখেছে। ভাটিয়ারী-হাটহাজারী সড়কে মিনিট খানেক গাড়িএগুলেই পাহাড়ীপথের শুরুটাই এমন যে তাক লাগিয়ে দেয় আগতদের। রাস্তার দু’ধারেরয়েছে জোড়া লেক। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা এ মাঠের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৬হাজার গজ। ক্লাবের সামনেই রয়েছে এক গলফারের ভাস্কর্য।
সীতাকুণ্ডে, ভ্রমনকারীদের জন্য ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব অন্যতম একটি আকর্ষনীয় স্থান যা প্রাকৃতিক জলাধার এবং পাহাড় দিয়ে আবৃত। এখানে বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন জাতের গাছ, পশু এবং পাখি দেখা যায়। এ থেকেই বুঝা যায়যে এই এলাকাও প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যে পরিপূর্ণ। যদিও এই এলাকা বাংলাদেশমিলিটারী একাডেমীর নিয়ন্ত্রনাধীন, ভ্রমণকারীরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এ এলাকা ভ্রমন করতে পারবেন। আপনি এলাকায় প্রবেশ করারসময় কোন ক্যামেরা, রেকডিং ডিভাইস আনতে পারবেন না এবং আপনি এ এলাকার কোন ছবি তুলতে পারবেন না। এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে মান সম্পন্নগলফ ক্লাব। এখানে সারা বছর ধরে নানা দেশী এবং আর্ন্তজাতিক গলফ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। 

কিভাবে যাওয়া যায়: 

চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরেই সীতাকুন্ড উপজেলায় ভাটিয়ারী গলফ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবটি অবস্থিত। ভাটিয়ারী-হাটহাজারী সড়কে মিনিটখানেক গাড়ি এগুলেই পৌছে যাওয়া যায় গলফ ক্লাবে।  

হালদা নদী

হালদা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাটনাতলী পাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে এটি ফটিকছড়ির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করেছে। এটি এর পর দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পরে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফটিকছড়ির বিবিরহাট, নাজিরহাট, সাত্তারঘাট, ও অন্যান্য অংশ, হাটহাজারী, রাউজান, এবং চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালী থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি কালুরঘাটের নিকটে কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮১ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২৯ কিলোমিটার অংশ সারা বছর বড় নৌকা চলাচলের উপযোগী থাকে।
নামকরণ :
হালদা খালের উৎপত্তি স্থল মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ী গ্রাম সালদা। সালদার পাহাড়ী র্ঝণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে হালদা নামকরণ হয়। সালদা নামে বাংলাদেশে আরো একটি নদী আছে যেটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
উপনদী :
হালদা খালের উৎপত্তি স্থল মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ী গ্রাম সালদা। সালদার পাহাড়ী র্ঝণা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে হালদা নামকরণ হয়।সালদা নামে বাংলাদেশে আরো একটি নদী আছে যেটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
মাছের ডিম ছাড়া :
প্রতিবছর হালদা নদীতে একটি বিশেষ মূহুর্তে ও বিশেষ পরিবেশে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মাতৃমাছ প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার বিশেষ সময়কে তিথি বলা হয়ে থাকে। স্থানীয় জেলেরা ডিম ছাড়ার তিথির পূর্বেই নদীতে অবস্থান নেন এবং ডিম সংগ্রহ করেন। ডিম সংগ্রহ করে তারা বিভিন্ন বাণিজ্যিক হ্যাচারীতে উচ্চমূল্যে বিক্রী করেন।
হালদা নদীতে রুই মাছ ছাড়ার কারণ :
হালদা নদী এবং নদীর পানির কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য এখানে মাছ ডিম ছাড়তে আসে যা বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে ভিন্ন তর । এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভৌতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক। ভৌতিক কারন গুলোর মধ্যে রয়েছে নদীর বাঁক , অনেকগুলো নিপাতিত পাহাড়ী ঝর্ণা বা ছড়া , প্রতিটি পতিত ছড়ার উজানে এক বা একাধিক বিল, নদীর গভীরতা , কম তাপমাত্রা , তীব্র খরস্রোত এবং অতি ঘোলাত্ব । রাসায়নিক কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে কম কন্ডাক্টিভিটি , সহনশীল দ্রবীভুত অক্সিজেন । জৈবিক কারণ গুলো হচ্ছে বর্ষার সময় প্রথম বর্ষণের পর বিল থাকার কারণে এবং দুকুলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদীর পানিতে প্রচুর জৈব উপাদানের মিশ্রণের ফলে পর্যাপ্ত খাদ্যের প্রাচুর্য থাকে যা প্রজনন পূর্ব গোনাডের পরিপক্কতায় সাহায্য করে। অনেক গুলো পাহাড়ী ঝর্ণা বিধৌত পানিতে প্রচুর ম্যেক্রো ও মাইক্রো পুষ্টি উপাদান থাকার ফলে নদীতে পর্যাপ্ত খাদ্যাণু র সৃষ্টি হয় , এই সব বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে হালদা নদীতে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছকে বর্ষাকালে ডিম ছাড়তে উদ্ভুদ্ধ করে য বাংলাদেশের অন্যান্য নদী থেকে আলাদা।

কিভাবে যাওয়া যায়: 

উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।  

মোড় চেরাগি

ব্যস্ততার নান্দনিক শহর বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ও সৃজনশীল চর্চার চারণ ক্ষেত্র হিসেবে ইতোমধ্যে চেরাগি পাহাড় চত্বর পরিচিতি লাভ করেছে। এলাকাটি বর্তমানে চেরাগি মোড় নামেই পরিচিত। সময়ের সাথে নানা বয়সের জ্ঞানমনষ্ক মানুষের আনাগোনায় নিত্য সরগরম হয়ে ওঠে এই চেরাগী পাহাড় চত্বর। এখানে কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যজন, শিল্পী, গায়ক, সৃজনশীল বইপত্রের পাঠক, সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিককর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আনাগোনা ও আড্ডায় মুখরিত হয়ে থাকে পুরো এলাকার পরিবেশটি। সংস্কৃতি আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এ ঐতিহ্যকে ধারণ করে সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা ও কিঞ্চিৎ হলেও উপস্থিত হয়ে স্বস্তি খুঁজে নিতে সকাল-সন্ধ্যা কিচির মিচির গুঞ্জনে পুলকিত হয়ে ওঠে এলাকাটি। চেরাগি পাহাড়ের অবস্থান ডিসি হিলের উত্তর পাশে মোমিন রোড এবং জামাল খান রোডের সংযোগ স্থলে। তাই চতুর্দিকের পেশাজীবী, চাকরীজীবী, শিক্ষক-ছাত্র হতে শুরু করে মননশীল মানুষের মিলনের মোহনায় পরিণত হয়ে ওঠে। এছাড়াও বিভিন্ন মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের প্রধান অফিস ও ব্যুরো কার্যালয় থাকায় সংপত্রসেবীদের কাছে এই স্থানটি বিশেষভাবে আকৃষ্টের উপকরণ। চিত্ত ও মননের এক নান্দনিক মালঞ্চ হিসেবে এখানে সব সময় বিরাচিত ফুলেল মৌ মৌ সৌরভ। তাই বিস্তর পরিসর না হলেও স্বল্প পরিসরে এই এক চিলতে আঙিনা মরুময় প্রান্তরে মরুদ্যানের মতই। নাগরিক জীবনের ইটপাথরের কাঠিন্যের মধ্যেও এখানে মননের সবুজ সজিবতার এক মোহময় আবেশ ছড়িয়ে থাকে অষ্টপ্রহর। মানুষের সৃজন কর্মের বিকাশে চেরাগি পাহাড় এলাকাটি সৃষ্টিসুখের নেশায় বিভোর; এখানে বেলা-অবেলায়, খেয়ালে-বেখেয়ালে আগন্তুকদের সময় গড়ায়। ক্রমশ সবার মাঝে বাড়ছে চেরাগি মোড়ের সম্মোহনী টান।
ইতিহাস বলে : পূর্বে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য আরব দেশ হতে সুফি সাধক হযরত বদর আউলিয়া (র.) সমুদ্রে ভাসমান এক খণ্ড পাথরের উপর আরোহন করে চট্টগ্রামে আসেন। তখন চট্টগ্রাম শহর ছিল জন-মানবহীন গভীর পাহাড় পর্বতে ঘেরা এবং জ্বীন-পরীদের বাসস্থান। হযরত বদর আউলিয়া (র.) একটি অলৌকিক মাটির চেরাগ হাতে নিয়ে গভীর বন-জঙ্গল দিয়ে একটি পাহাড়ের উপর উঠলে জ্বীন-পরীরা তাকে বাধা দেয় এবং বলে, তাদের আবাস স্থলে কোন মানুষের স্থান নেই। রাতের অন্ধকার নেমে আসলে হযরত বদর আউলিয়া (র.) জ্বীন পরীদের নিকট শুধু চেরাগ রাখার স্থানটুকু চাইলে তারা সম্মতি জ্ঞাপন করে। তিনি অলৌকিক চেরাগ জ্বেলে দিলে তা থেকে তীব্র তেজ বিকিরণ করতে থাকলে জ্বীনপরীরা শরীরে প্রকট জ্বালা যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকে।  অতঃপর এক পর্যায়ে তারা চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় এবং আস্তে আস্তে এখানে মানুষ বসবাস করতে শুরু করে। এভাবেই চেরাগ রাখার পাহাড় চেরাগী পাহাড় নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতীকী অর্থে এখান  থেকে চেরাগ জ্বালিয়ে আলোকিত করেছিল চট্টগ্রাম এবং সেই থেকে আজ অবধি চট্টগ্রাম আলোকিত হয়ে উঠছে ক্রমাগত।
হরেক রকম হাট :  অসংখ্য দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, প্রকাশনা সংস্থা, মুদ্রণ, হকার সমিতির পাশাপাশি রয়েছে এলাকার আশেপাশে সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান, ব্যান্ড দল, ব্যাংক-বীমা, অ্যাডফার্ম, স্টেশনারি, কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র, হাসপাতাল, মন্দির, হল সর্বোপরি সকল প্রকার বাণিজ্যিক, সমাজকল্যাণমূলক ও শিল্প সাহিত্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিনই ছুটে আসছে এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শহর বন্দর গ্রামগঞ্জ হতে শত শত হাজার হাজার মানুষ। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের অন্যতম এ চেরাগী পাহাড়ে  দৈনিক লেনদেন হচ্ছে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার। যেখানে ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও চেরাগী পাহাড়কে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য, ক্লিনিক, হসপিটাল, ডায়াগোনস্টিক সেন্টার, কোচিং সেন্টার। অপর দিকে বেকারত্বের চাহিদা পূরণ ও সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ এ জায়গা থেকে উঠে আসছে বলে ধারণা করা যায়।
ভোরের চেরাগি : কাকডাকা ভোরে হকার সমিতিকে কেন্দ্র করে হকারদের আগমনে শুরু হয় ব্যস্ততা। দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন হকারেরা। ভোরের পাখির মতো তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকাটি। সাইকেলের টুংটাং শব্দে আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠে চেরাগি পাহাড় মোড়। এছাড়াও পত্র-পত্রিকা সংশ্লিষ্ট কবি, সাংবাদিক ও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সংগঠনের নেতাকর্মী ও প্রিন্টিং প্রেস সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মে জড়িত মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে।
সন্ধ্যার আড্ডা : সন্ধ্যা হলেই আড্ডা জমায় ঝাঁকে ঝাঁকে তরুণ-তরুণীর পাশাপাশি সব বয়সী মানুষ, আড্ডার ফাঁকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চটপটি, ফুচকা আর চা-পান তো রয়েছেই। মিডিয়াপাড়া হিসেবে খ্যাত চেরাগি পাহাড়ের আড্ডায় চলে সমালোচনা, আলোচনা, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, সঙ্গীত, কবিতাপাঠ, উপস্থিত হয় সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, বাম রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সর্বোপরি সকল শ্রেণীর মানুষ। সবকিছু মিলিয়ে এলাকার ঐতিহ্য ও নান্দনিকতার ধারা দিন দিন বেড়েই চলছে। আর ক্রমাগত আধুনিক হয়ে উঠছে ব্যস্ততম চেরাগী পাহাড় এলাকার চেহারা।
মধ্য রাতেও মুখর চেরাগি : রাত ২টা ৩টার আড্ডারুরা ভিন্ন ক্যাটাগরির হয়। পত্রিকা ও প্রেসের কর্মীরা সামান্য স্বস্তিতে øান করতে চেরাগি মোড়ে আড্ডা জমায় নির্জন রাতে। সব দোকানপাট খোলা না থাকলেও যে দুয়েকটা খোলা থাকে সেদিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রঙিন চা-বিস্কিট আর একটা সিগারেটের জন্য। সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে আড্ডাটা মোড় অন্য দিকে। ধীরে ধীরে কমে আসে চেরাগির কোলাহল।
প্রকাশনা সংস্থা ও বইঘর : প্রকাশনা সংস্থাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিকদের আনা-গোনায় জমে উঠে চেরাগির আড্ডা। আর প্রকাশনা সংস্থা শৈলী প্রকাশন, আবীর প্রকাশন, নন্দন, শব্দচাষ, বলাকা প্রকাশন তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। এছাড়াও অভিজাত বুকস্টলÑ বাতিঘর, নন্দন, অদূরে রয়েছে প্রথমা,  গ্রন্থনিলয়। বইপ্রেমী মানুষের আড্ডাস্থলের পাশাপাশি পাঠকের সৃজনশীল ও মূল্যবান বইয়ের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে। কিছুদূর কথাকলি নামের বইয়ের দোকানটি কালের সাক্ষী হয়ে নীরবে বসে রয়েছে।
ফুলের রাজ্য, এবং... : অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি চেরাগী পাহাড় এলাকাটির অন্যতম নান্দনিক পরিবেশে রূপ দিয়েছে এলাকার ফুলের দোকানগুলি। বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা। দেখলে মনে হবে এ যেন পুরোটায় ফুলের রাজ্য। যদিও মাঝে মাঝে সাধারণ মানুষের যাতায়াত ও যানজট সৃষ্টি করে। তবুও ফুলের সুবাসে মুগ্ধ করে রাখে সবাইকে। আবার সামনে হাসপাতাল, ঔষধের দোকান; রয়েছে গার্মেন্টস। গার্মেন্টস এর তৈরি পোশাকগুলো রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। আর পত্রিকা অফিসগুলো রাজ্যের খবর বিলি করে বেড়ায় দেশব্যাপি। অবশ্য পত্রিকা অফিস ও সাংবাদিকদের ভূমিকাটাই চেরাগি মোড়ের আসল প্রাণ। কবি-সাংবাদিক এবং সংস্কৃতিসেবিরাই যেন চেরাগি মোড়ের নিত্য সহচর। এরা যেন একে অপরের দোসর। ওদিকে, ডিসি হিলের মধ্যে নিঝুম থাকার কিছু সময়ও পাওয়া যায়। পাওয়া যায় অতি আপন জনের ঘনিষ্ঠ সাহচার্যও। হোক না তা অল্প সময়ের জন্য হলেও। অফিসে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠার আগেই ‘তাকে’ এক নজর দেখার সুযোগ করে দেয় ডিসি হিল। অবশ্য এখানে মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানও হয়। অধিকাংশ অনুষ্ঠানই বাংলা ও বাঙালিকে ঘিরে, বাংলা সংস্কৃতির লালনের জন্য। বলতে গেলে, নগরকে মোহিত করে রাখে এই সামান্য সবুজ পাহাড়। এ উপত্যকার একটি প্রান্ত চেরাগি পাহাড়। যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল।
মিলনায়তন : চেরাগিকে ঘিরে রয়েছে ‘মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী মেমোরিয়াল হল’। যেখানে প্রায় অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নাট্যকর্মীদের রিহার্সেলের ব্যস্ততা। ফলে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি জমজমাট পরিবেশ সৃষ্টি হয় এলাকাটিতে। 
নাট্যদল : চেরাগি সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নাট্যদলও। এদের পদচারণায় বেড়ে গেছে চেরাগি প্রাণচাঞ্চল্য। নাট্য দলগুলোর মধ্যে চোখে পড়ে- বিনোদিনী, ফেইম, লোক থিয়েটার, প্রতিনিধি, প্রতিভাস, ইত্যাদি।
আবৃত্তি সংগঠন : কম যায় না আবৃত্তি সংগঠনগুলোও। আড্ডা জমায় বোধন, প্রমা, ত্রিতরঙ্গ, কিংবদন্তি, অনার্য অন্যস্বর, শব্দ নোঙরের সদস্যরা।
গান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন : চারণ, উদীচী, সমগীত, অবসর, লোক সাং®কৃতিক মঞ্চ ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যপড়–য়া তরুণ-তরুণী : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়টা চট্টগ্রাম শহরের একটু দূরেই বটে, তবে চট্টগ্রাম শহর থেকেও প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যান অনেক শিক্ষার্থী। ক্লাস বন্ধ, কিংবা বিশেষ সময় সুযোগ পেলেই সহপাঠি অথবা পরিচিত তরুণ-তরুণীরা ঢু’মারেন চেরাগিতে। কথাবার্তা, ভাব-বিনিময় ছাড়াও কিছুটা সংস্পর্শে আসতে পারাটাই মুখ্য। পাছে দু'একটা বই কেনা আর কি! আবার তারা জম্পেশ আড্ডায় মেতে উঠে নন্দন, বাতিঘরের সামনে।
লিটলম্যাগ কর্মী : নতুন কোন্ বইটি বাজারে এসেছে, কোন্ লিটলম্যাগ এসেছে, কারা লিখেছে, বিভিন্ন কাগজের আলোচনা সমালোচনার আড্ডায় মুখরিত করে রাখেন লিটল ম্যাগ কর্মীরা। নতুন নতুন চিন্তার সমন্বয় নিয়ে কথা, বড় কাগজ- ছোট কাগজ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক লেগেই আছে।

তথ্যসূত্র :